আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত মাদারীপুর ১ আসনটি শিবচর উপজেলার ১৯ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ বিধৌত এক জনপদ। বহুপূর্ব থেকেই জেলার এ জনপদটি আওয়ামী অধ্যুষিত। সাধারণ ভোটারদের বড় একটি অংশ আওয়ামীলীগকে সমর্থণ করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বর্ষিয়ান একাধিক ভোটার জানান, 'মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদা ভাই) এর হাত ধরেই অত্র এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী চেতনা তৈরি হয়। ১৯৯১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মাদারীপুর ১ আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে। এ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি এবং এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বিপুল ভোটের ব্যবধানেই আ.লীগের নিকট বরাবর পরাজিত হয়েছে অন্যদল।
এ আসনটিতে আওয়ামীলীগের বিকল্প হিসেবে ভোটাররা অন্য কোন দলকে ভাবতে পারে না বলে জানান নেতাকর্মীরা। শিবচরের উন্নয়নের দিক বিবেচনায় আওয়ামীলীগের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলেও তাদের মন্তব্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ বিধৌত মাদারীপুর ১ আসনের শিবচর উপজেলা ১৯টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত একটি আধুনিক উপজেলা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজোড়িত শিবচর উপজেলা মূলত আওয়ামী অধ্যুষিত জনপদ। ইতোপূূর্বে জাতীয়ভাবে যে দলই সরকার গঠন করেছে, মাদারীপুর ১ আসনে সব সময় আওয়ামীলীগ বিপুল পরিমান ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে।
১৯৯১ সালে মাদারীপুর ১ আসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদা ভাই) আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে তারই জৈষ্ঠ্য পুত্র নূর-ই- আলম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে টানা ৬ষ্ঠ বারের মতো তিনিই মাদারীপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য। বর্তমানে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ তিনি। শিবচর আওয়ামীলীগের রাজনীতি তাকে ঘিরেই। উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পদ-পদবী নিয়ে কোন মতবিরোধ বা সংঘাত নেই। ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দলের জন্য সকলে একত্রিত হয়ে কাজ করছেন বলে শিবচর উপজেলা আওয়ামীলীগ সূত্র জানিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা.মো. সেলিম বলেন,'শিবচরের ৮০ ভাগ জনগন আওয়ামীলীগে ভোট দেন। আমরা আগামীতেও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো আশা করি। শিবচরের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আওয়ামীলীগই করেছে। আমাদের নেতা নূর-ই-আলম চৌধুরী করেছেন। এক সময় শিবচরে সরকারি কর্মকর্তারা কেউ আসতে চাইতো না। রাস্তাঘাট ছিল না। এখন শিবচরে এলেই চোখ জুড়িয়ে যায় সকলের। আধুনিক শিবচরের এ অবদান মানুষ ভুলবে না।'
তিনি বলেন,'শিবচর উপজেলা আওয়ামীলীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনে কোন মতবিরোধ বা কোন্দল নেই। গত ১০ বছরেও কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূল পর্যায়েও কোন মতবিরোধ হয়নি। শিবচর উপজেলা আওয়ামীলীগ সুসংগঠিত এবং নেতা-কর্মীরা পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে কাজ করে। একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠন সুদৃঢ়। এবং আমাদের কমিটি সকলের মতামত ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে গঠন করা হয়ে থাকে। একারণেই সকল সিদ্ধান্ত ¯^ানন্দ্যচিত্তে সবাই মেনে নেয়। ফলে কমিটি গঠন নিয়ে কোন মতবিরোধ বা কোন্দলের নজির নেই শিবচরে।'
আগামী নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন,'আওয়ামীলীগ সরকার উন্নয়ন বান্ধব সরকার। আমাদের শিবচরের দিকে তাকালে স্পষ্ট দেখা যায়। আমাদের প্রিয় নেতা, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি শিবচরকে একটি আধুনিক উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আমরা সাধারণ মানুষকে উন্নয়ন সম্পর্কে বলছি, দেখাচ্ছি। দলীয় ও জাতীয় দিবস আমাদের নেতা-কর্মীরা ¯^তঃস্ফুর্ত ভাবে পালন করছে। সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌছে দিচ্ছে।'
অপর দিকে বিএনপি :
শিবচর উপজেলা বিএনপিতে মতপার্থক্য প্রবল ভাবে বিদ্যমান। বেশ কয়েকজন নেতা নিজ মতানুযায়ী দলীয় কর্মসূচী পালন করে থাকে। দলীয় মত পার্থক্য থাকার কারণে উপজেলা পর্যায়ে দলটি সুসংগঠিত হতে পারছে না বলে তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক বিএনপি নেতা এবং সমর্থকেরা জানান।
তবে সম্প্রতি বিএনপির সম্মেলন ঘিরে চাঙ্গা হতে চেষ্টা করছে শিবচর উপজেলা বিএনপি। তবে দীর্ঘ ছয় বছরেও উপজেলা বিএনপি'র কোন কমিটি গঠিত হয়নি। একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে দলীয় নানা কর্মসূচী পালনের চেষ্টা করছেন তারা। উপজেলায় দলের এই অবস্থা থেকে বের হয়ে এসে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যাশা একাধিক বিএনপি নেতার।
জানা গেছে, আওয়ামীলীগ অধ্যুষিত পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ বিধৌত জনপদ মাদারীপুর জেলার শিবচর। ১৯ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত উপজেলাটি মাদারীপুর ১ সংসদীয় আসন। উপজেলাটিতে আওয়ামীলীগের সমর্থক ৮০ ভাগ। তবে মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের পরেই বিএনপির অবস্থান। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের তেমন কোন কর্মসূচী চোখে পড়ার মতো নেই।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল হুদা মিঠু চৌধুরীর মৃত্যুর পর উপজেলা বিএনপি'র কোন কমিটি গঠন হয়নি। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কমিটি বিহীন উপজেলা বিএনপিতে সভাপতি পদের প্রত্যাশী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে কমপক্ষে ৫ জনের। এরাই দলীয় কর্মসূচীসহ বিভিন্ন সময় বিএনপির কর্মসূচি-মিটিং-দিবস উদযাপন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে করে থাকেন। প্রত্যেকেরই আলাদা করে কর্মী-সমর্থক রয়েছে। এদের মধ্যে থেকে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন একাধিক জন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় গত নির্বাচনে অংশ নেয়া সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু, আবু জাফর চৌধুরী, নাদিরা মিঠুসহ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবেন, একযোগে সকলেই তার নির্বাচন করবেন বলেও জানান নেতারা।
এদিকে কমিটি না থাকায় দল গোছানো বেশ কষ্টকর বলে মনে করেন উপজেলার শীর্ষ নেতাদের অনেকেই। নির্বাচনের আগে মতভেদ ভুলে নতুন কমিটি গঠন করে কাজ করতে চান তারা। বর্তমানে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হলেও কারো মধ্যে কোন সমš^য় নেই। নিজেদের মতো করেই কার্যক্রম চলে বলে জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে,'দ্রুত কমিটি গঠন না হলে তৃনমূল বিএনপি গোছানো যাবে না। ১৯ টি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকেই ইতোপূর্বে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছে। যারা আছেন, তারাও রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। তবে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে আবারো চাঙ্গা হচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতা আবু জাফর চৌধুরী, নাদিরা মিঠু, সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু, জহের গোমস্তা, শাহাদাৎ কমিশনারসহ একাধিক বিএনপি নেতা ঘিরে ঘরোয়া মিটিং-বৈঠক হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু বলেন,'উপজেলা বিএনপিসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন খুবই জরুরী। আমরা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তবে নির্বাচন কাছাকাছি এলে বিএনপি নেতা-কর্মী সকলেই একত্রে কাজ করে। আগামী নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী।'
সভাপতি পদ প্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠুর সহধর্মিনী নাদিরা মিঠু বলেন,' আমি গত ৬ বছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছি। তবে উপজেলাতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কোন কমিটি নেই। তৃণমূলেও কোন কমিটি নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিটি গঠন করা জরুরী। আমরা শিবচরের বেশ কয়েকজন জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটিতে আছি। জেলাতেও পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। বিএনপির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে কমিটি গঠন হলে সকলে একত্রিত হয়ে কাজ করা যেতো; এখন বিভক্ত হয়ে যার যার মতো কাজ করছে।'
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী বিএনপি নেতা শাহাদাৎ হোসেন (পৌরসভার সাবেক কমিশনার) বলেন,'উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন হলে সকলে মতভেদ ভুলে একত্রে কাজ করতে পারতাম। দলকে সুসংগঠিত করতে হলে কমিটি গঠনের বিকল্প নেই। এখন আমরা অনেকেই সভাপতি-সেক্রেটারী পদের জন্য দৌড়ঝাপ করছি। নিজ নিজ বলয় তৈরি করছি। কমিটি হয়ে গেলে সকলে একসাথে দলকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে পারতাম। এখন আমাদের কোন পরিচয় নাই। আমরা কোন পরিচয় দিতে পারি না। নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলা বিএনপি'র কমিটি গঠনে কেন্দ্রের দৃষ্টি কামনা করছি।'
উপজেলা বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু জাফর চৌধুরী বলেন,' কমিটিতে যাকেই সভাপতি-সেক্রেটারি করবে আমরা তার নেতৃত্বে বিএনপির জন্য কাজ করে যাবো। তাছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কয়েকজন আছি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল যাকে দেবে তাকে নিয়েই আমরা কাজ করবো। দলীয় স্বার্থই আমাদের কাছে বড়।'
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com