সাব্বির আলম বাবু।।
ইলিশের উৎপাদন কেবল কাগজপত্রেই।সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছরই বরিশালে ইলিশের উৎপাদন বাড়ে। কিন্তু জেলেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, বরিশালে আগের চেয়ে ইলিশ উৎপাদন কমেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় ভরা মৌসুমেও ইলিশ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকার পরও বরিশালের বৃহত্তর পাইকারি বাজার পোর্ট রোডে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ইলিশের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬২ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই উৎপাদন এসে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টনে। অর্থাৎ গত ১৩ বছরে বরিশালে ২ লাখ ১ হাজার ৫৮১ টন বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। যা প্রায় দ্বিগুণ। মৎস্য আড়তদার আক্তার হোসেন বলেন, ‘সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বাজারে ইলিশ কোথায়? জেলেরা সমুদ্র উপকূলে ইলিশ আহরণে গিয়ে বেশির ভাগ সময় খালি হাতে ফিরে আসেন। আবার কোনো কোনো জালে যে পরিমাণের ইলিশ ধরা পড়ছে তা আশানুরূপ নয়। বিধায় ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে, এ কথা আমরা বলতে পারছি না।’ গত তিন-চার বছর আগেও ইলিশের ভরা মৌসুমে বরিশাল পোর্ট রোডে প্রতিদিন ৮-১০টি ফিশিং বোর্ড আসত। এ ছাড়া কলাপাড়া ও মহিপুর থেকে ১৪-১৫টি ট্রাক ইলিশ নিয়ে আসত। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ ইলিশ বেচাকেনা হত। শ্রমিকদের দম ফেলার অবস্থা থাকত না। কিন্তু এখন দিনে ৫০ মণ ইলিশও আসছে না। বলতে গেলে ইলিশশূন্য পোর্ট রোড বাজার এক প্রকার ফাঁকা পড়ে আছে। ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে আড়ত মালিকদের।
বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর আকার ও মানভেদে ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়, গত বছর একই আকারের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত বছর তা বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, আর গত বছর এই ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সদস্য ইয়ার হোসেন বলেন, ‘নদীর পানি দূষণ, বৈরী আবহাওয়া এবং সাগর মোহনার গভীরতা কমে যাওয়াসহ নানা প্রাকৃতিক কারণে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। ২৩ জুলাই ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এক মাস হতে চললেও জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদেরও লোকসান গুণতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে চাহিদার তুলনায় ইলিশের সরবরাহ কম, তাই দামও বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।’ বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা প্রকাশ হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০ থেকে ১২ হাজার টন ইলিশ বেশি আহরণ হবে বলে আশা করি।’
বরিশালে ইলিশের সরবরাহ কম থাকার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় এখানকার আড়তে জেলেরা কম আসেন। সাগর থেকে আহরিত ইলিশ বেশির ভাগই কলাপাড়া, মহিপুর, আমতলি, বরগুনা থেকে সরাসরি ঢাকায় চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, ভোলার জেলেরা মাছ ধরে হয় ঢাকা না হয় চাঁদপুরে নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর সময় মতো ইলিশ ধরা পড়েনি। কিন্তু ভারী বর্ষণ হলে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com