পাশের দেশ ভারতের উজান থেকে আসা পানির ঢল, অতি বর্ষণ আর নদীর পানি উপচে পড়াতে বাংলাদেশের ১২টি জেলা ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় আক্রান্ত। বসতবাড়ি, গবাদি পশু ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ১১ জেলার ৭৭ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৮৭টি। ১১ জেলায় এখন পানি-বন্দী আছে ৯ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯। বন্যার পানিতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী জেলা, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা বিশুদ্ধ খাবার পানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার সীমিত সুযোগের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এই বন্যায় ১২ জেলার মোট দুই হাজার মোবাইল টাওয়ার ধসে গেছে এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, পানি-বন্দি প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ, বিদ্যুৎ-হীন অবস্থায় ১১ লাখ মানুষ। এছাড়াও ৩.৫ লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা আগামী দিনের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় হুমকি হতে পারে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ, সাহায্য-সহযোগিতা ও বিতরণের সময় স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিকে অর্থবহ করতে হবে। সহায়তা পাওয়ার উপযোগীদের সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাজে সহযোগিতা ও সমন্বয় করতে হবে। কেউ একাধিকবার পাবে আবার কেউ বঞ্চিত হবে, এমন যেন না হয়। দুঃখজনক বিষয় হলো, বন্যার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবছরই অভিজ্ঞতা অর্জন করি, কিন্তু সাধারণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয় না। যেহেতু বন্যা প্রতি বছরই হয়, সেহেতু বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য থাকার কথা। আমাদের অভিজ্ঞতা ও মোকাবিলায় নেয়া পদক্ষেপ অন্য দেশগুলোর গ্রহণ করার কথা! কিন্তু প্রতি বছরই আমরা শিখছি। বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিশুখাদ্য, ওরস্যালাইনসহ জরুরি ওষুধ-পথ্যও প্রয়োজন। বন্যাদুর্গতদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং সরকার সংশ্লিষ্টদের নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে পানিবাহিত রোগবালাই বাড়ে। তাই বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে প্রস্তুতি জরুরিভাবে গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com