নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ-প্রায় সবই নদীনির্ভর। তাই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। অথচ বহু নদী এরইমধ্যে মরে গেছে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বহু নদী হারিয়ে গেছে। পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে বহু নদীর তলদেশ। দেশের ৯০ শতাংশ নদীই নাব্যতা সংকটে ভুগছে। সাম্প্রতিক বন্যায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ হিসেবে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া কিংবা নদীর নাব্যতা না থাকাকেই মূলত দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের একটি প্রতিবেদনে গভীর উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছিল। তাতে বলা হয়, গত ৪৫ বছরে উধাও হয়েছে দেশের ৬০০ নদ-নদী। বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক নদ-নদী এ সময়ে শুকিয়ে মরে গেছে উল্লেখ করে বলা হয়, ১৩০০-এর মতো নদ-নদী ছিল, কিন্তু এখন তার সংখ্যা নেমেছে ৭০০-তে। নদ-নদীর হারিয়ে যাওয়ার এই চিত্রের পরও এ বিষয়ে আমাদের উদাসীনতা কমেনি। নদী রক্ষায় সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে দাবি উঠলেও তা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। ফলে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নজরে আসেনি। কেউ-ই পরিকল্পনামাফিক নদী বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। তাই একে একে হারিয়ে যেতে বসেছে নদী ও জলাশয়। আর ধুঁকে ধুঁকে ওষ্ঠাগত প্রাণে যেগুলো টিকে আছে তারাও দখলে-দূষণে শুকিয়ে মৃতপ্রায়। ফলে বর্ষায় একটু পানি হলেই পাড় উপচে পড়ে। আমাদের নদ-নদীতে পানির অভাব যেমন প্রাকৃতিক কারণে নয়, তেমনি অসময়ে পানির প্রাচুর্যতাও সব সময় প্রাকৃতিক নয়। উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা নদীগুলো বাংলাদেশের প্রাণ। কিন্তু আন্তর্জাতিক সব নীতি লঙ্ঘন করে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর উজানে বাঁধ দিয়েছে ভারত। এর মাধ্যমে দেশটি একদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি সরিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ার আগ্রাসী তৎপরতাও দেখাচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ দেশ বাংলাদেশ। ঝড়, বন্যাসহ নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সইতে হয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পেছনে দায়ী করা হচ্ছে সরাসরি মানুষের কর্মকা-কেও। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। কখনো বৃষ্টিহীনতা, কখনো একটানা প্রবল বৃষ্টি, যেমনটি সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল; এসব কারণে বন্যার ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল ও সম্পদহানি ছাড়াও বন্যায় সড়ক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়ক মেরামতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। বন্যা থেকে রক্ষা পেতে দ্রুততম সময়ে নদীগুলো খনন করতে হবে। বন্যার ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে নদীগুলো খনন করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com