নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চাঁদাবাজি, হুমকি-ধামকি, ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার: মোঃ মাহবুবুর রহমান।
বাংলাদেশের গ্রামীণ রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা অনেক সময় আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়। এমনই এক গল্প সিলেট বিভাগের ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ মাহবুবুর রহমানের, যিনি স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, হুমকি এবং চাঁদাবাজির শিকার হন। একজন সফল ব্যবসায়ী থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষ – এটি শুধুমাত্র তার গল্প নয়, বরং একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
মোঃ মাহবুবুর রহমান, সিলেটের উমদারপাড়া গ্রামের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার পাথর ভাঙার কারখানা “মেসার্স সুবর্ণা এন্টারপ্রাইজ” এবং যানবাহন বিক্রয়ের ব্যবসা “সুবর্ণা মোটরস” সিলেট অঞ্চলে সুপরিচিত। দুই দশকের বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করে তিনি নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন, যার ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় হতো এবং যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২৫ জনের বেশি কর্মচারী কাজ করতেন।
তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি সিলেট বিভাগীয় সড়ক পরিবহন সংগঠনের সেক্রেটারি হিসেবে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতেন। এসব কর্মকাণ্ডে সাধারণ জনগণের ভালোবাসা অর্জন করেন তিনি।
২০২৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে মাহবুবুর রহমান চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোঃ ইকলাল আহমেদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। জনসাধারণের মধ্যে মাহবুবুরের গ্রহণযোগ্যতা দেখে ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশ বিচলিত হয়ে পড়ে।
ইকলাল আহমেদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি তারা মিয়া মাহবুবুর রহমান কে হুমকি দেন এবং চাঁদা দাবি করে। পাশাপাশি তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়। তারা দাবি করে যে তারা এমপি মোমেনের ঘনিষ্ঠ। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মাহবুবুর শেষমেশ টাকা দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাহার করেন।
নির্বাচনে জয়লাভ করেন আরেক প্রার্থী মোঃ দিলাওয়ার হোসেন, যাকে মাহবুবুর রহমান সমর্থন করেছিলেন। নির্বাচনের পর, আবারও ইকলাল আহমেদ ও তারা মিয়া মাহবুবুরের কাছ থেকে বড় অংকের ক্ষতিপূরণ দাবি করে এবং হুমকি দেয়।
মাহবুবুর থানায় গেলে পুলিশ জানায় তারা কিছু করতে পারবে না, কারণ অভিযুক্তরা এমপি মোমেনের ঘনিষ্ঠ। পুনরায় এক লাখ টাকা দিয়ে তিনি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এভাবেই, একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক, মাহবুবুর রহমান কে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অমানবিক নির্যাতন করে চলছে। হুমকী, চাঁদাবাজি ও অপরাধের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের সহায়ক হিসেবে আছে দলের বড় বড় নেতারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাগণ। এমপি মোমেনের তৈরি এই সিন্ডিকেট আজ অব্দি কেউ ভাঙতে পারেনি। যার বলী হচ্ছেন, মাহবুবুর রহমানের মত ব্যবসায়ীরা।
মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমি শুধু জনগণের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজনীতি এখন আর জনগণের জায়গা নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহারের প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে।”
মাহবুবুর রহমানের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির নোংরা বাস্তবতাকে তুলে ধরে – যেখানে জনপ্রিয়তা হয়ে ওঠে হুমকি, এবং যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে থাকে নত।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র একজন নির্যাতিত ব্যক্তির কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরিনি, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা পাঠিয়েছি – রাজনীতিকে যদি জনগণের সেবার মাধ্যমে বিশুদ্ধ না করা যায়, তাহলে আরও অনেক মাহবুবুর রহমান নিরবে হারিয়ে যাবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com