বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মসজিদে নামাজ পড়ে বাসার জন্য পান কিনে বাড়ি ফেরার পথে চিটাগাং রোডের হিরাঝিল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
শহীদ মনির হোসেন (৫৪) ছিলেন কুমিল্লার মনোরগঞ্জ উপজেলার তালতলা দাদঘর এলাকার আমিন বাড়ির বাসিন্দা। তার বাবা মো. মনতাজুর রহমান ও মা সাদিকা বেগম।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত মনির হোসেন ঢাকার চিটাগাং রোডের হিরাঝিল এলাকায় পাইনাদি নতুন মহল্লার পিএম মোড় এলাকার (পিএম টাওয়ার সমিতির বিল্ডিং)-এর কেয়ারটেকার ছিলেন। তিনি পরিবার নিয়ে এইচ-এ ২২২, পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় থাকতেন।
নিহত মনির হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে মোহাম্মদ সবুজ হোসেন (৩২) একজন প্রবাসী শ্রমিক। মেজ মেয়ে মেনু আক্তার (৩০) বিবাহিত। ছোট ছেলে সাব্বির হোসেন (২১) বেকার জীবন যাপন করছেন। মনির হোসেনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম একজন গৃহিণী (৪৫)।
২০২৪ সালের ২০ জুলাই তিনি প্রতিদিনের মতো দুপুরের খাবার খেয়ে কাজে যায়। পরে বিকালে আসর নামাজ পড়তে মসজিদে যান। নামাজ শেষে অন্য মুসল্লিদের সাথে বের হন। এর পর পান কিনে বাড়ি ফেরার পথে চিটাগাং রোডের হিরাঝিল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন।
পরে আহতবস্থায় স্থানীয়রা তাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করান। তারপর নেওয়া হয় ধানমন্ডি পপুলার হসপিটালে। সেখানে আইসিউতে থাকা অবস্থায় ২২ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেখান থেকে তার মরদেহ প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়। পরে ২৩ জুলাই কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার দাদঘরে এনে স্বজনরা তার মরদেহ দাফন করেন।
এ ঘটনায় গেল বছরের ২০ আগস্ট নিহতের ছোট ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে প্রধান আসামি করে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ প্রসঙ্গে নিহতের ছোট ভাই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন শামীম ওসমানের নির্দেশে রাস্তায় অবস্থানরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ-আওয়ামী লেিগর সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে। আমার ভাই মনির হোসেন এসময় হিরাঝিল রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা একটি মামলা দায়ের করেছি।’
এদিকে শহীদের পরিবারকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুলাখ টাকা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এর পক্ষ থেকে দুলাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন বলে জানান নিহতের ছোট ছেলে সাব্বির হোসেন।
মনির হোসেনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, আমার স্বামী দুপুরের খাবার খেয়ে বের হন। আসার সময় আমার জন্য পান নিয়ে আসার কথা ছিল। আমার জন্য পান কিনেওছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে আর বাড়িতে ফিরতে পারেননি। ফিরেছেন লাশ হয়ে।
যাওয়ার আগে দেশের অবস্থা ভালো না বলে সবাইকে সাবধানে থাকতে বলে যান। পরে তিনি নিজেই মৃত্যুর পথযাত্রী হলেন। আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়ি। শহরে বাসা ভাড়া থাকতাম। গ্রামের বাড়িতে কোনো ঘর করতে পারিনি। এখন থাকার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি।
শহীদ মনিরের ছোট ছেলে সাব্বির হোসেন বলেন, বাবাসহ পরিবার নিয়ে আমরা ঢাকায় থাকতাম। মূলত বাবাই আয় করতেন। আমি মাঝে মধ্যে ইলেকিিট্রকের কাজ করে পরিবারকে সহায়তা করতাম। এ নিয়ে কোন রকম পরিবার চলত।
সাব্বির বলেন, আমার এক ভাই প্রবাসে থাকলেও সেখানে তেমন কোনো সুবিধা করতে না পারায় বাসায় টাকা পয়সা পাঠাতে পারত না। আমাদের বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছি। অভাব-অনটনের কারণে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি।
গ্রামে আমাদের কোনো ঘর নেই। ফলে আশ্রয় চাচার ঘরের একটি রুমে নেয়েছি। সবাইকে গাদাগাদি করে একটিমাত্র রুমেই থাকতে হচ্ছে। আমাদের একটি থাকার ঘরের ব্যবস্থা হলে কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে। এ জন্য আমি সংশ্রিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া আমি বর্তমানে বেকার। একটি চাকরি ব্যবস্থা হলে পরিবারের হাল ধরতে পারব।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি বাসসকে বলেন, আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ মনির হোসেনের বাড়িতে গিয়েছি, খোজ-খবর রাখছি।
তিনি বলে, শহীদ মনিরের ছেলে একটি ঘরের আবেদন করেছেন। আমাদের এখানে বরাদ্দ না থাকায় বিশেষ বরাদ্দের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। সেটা হলে আমরা বাড়ি করে দেব। এছাড়া তাদের জন্য বরাদ্দ আসলে অন্যনা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com