মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি।।
প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে ডাক্তাররা তাদের জীবন বাঁচাতে এবং রোগ নিরাময় করতে সক্ষম। আর এ কারণে ডাক্তারদের মানুষ এক প্রকার শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখেন। অসুস্থতার সময় মানুষ নিজেদের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে। এ সময় তারা ডাক্তারদের ওপর নির্ভর করে এবং বিশ্বাস করে যে ডাক্তাররা তাদের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করবেন। একজন ভালো ডাক্তারের প্রতি মানুষের যেমন অগাধ বিশ্বাস তৈরি হয়। তেমনি একজন খারাপ ডাক্তারের প্রতিও মানুষের ঘৃনা জন্মায়! ডাক্তারী পেশা কেবল দায়ীত্ব পালন করে সম্মান অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এ পেশার মাধ্যমে দায়ীত্ব পালনের মধ্য দিয়ে মানুষকে সঠিক সেবাদানেরও দায়ীত্ব রয়েছে ডাক্তারদের। তবে এক শ্রেণীর ডাক্তাররা তাদের সম্মানের পেশাকে সেবার পরিবর্তে ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সাধারণ মানুষের গলায় প্রতি নিয়ত ছুড়ি ধরছে। তেমনি চিকিৎসা সেবাকে ব্যবসায় পরিনত করা আরাফাত জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টারের ডাক্তার শামসুন্নাহার মনির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন হাসপাতালে আগত রোগীরা। এমনকি ডাক্তার শামসুন্নাহার মনির বিরুদ্ধে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় টেষ্ট করতে বাধ্য করা, রোগীদের সাথে খারাপ আচারণসহ মনগড়া ফি আদায়ের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রোগীরা।
এদিকে ডাক্তার শামসুন্নাহার মনি যে হাসপাতালে বসেন সে হাসপাতালটির বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ করেন রোগীরা। আরাফাত জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টার নামে এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাবৎকাল পর্যন্ত যে কয়টি প্রসূতি নারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে দু'একটি ঘটনা ছাড়া সব কটি ঘটনাই মোটা অংকের টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে মর্মে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর। সম্প্রতি তাজপুর গ্রামের কুলসুম বেগম নামে এক নারীর জরায়ুর অপারেশন করতে গিয়ে ভুলক্রমে ওই নারীর নাড় কেটে ফেলে হাসপাতালটির ডাক্তার সাইকা আক্তার নিপা। ২০০৮ সালে রশুনিয়া ইউনিয়নের চোরমর্দ্দন গ্রামের শামসুন্নাহার নামে এক প্রসূতি নারী ভূল চিকিৎসার কারণ মারা যায়। প্রায় ছয়মাস পূর্বে জমজ দুটি বাচ্চাসহ প্রায় ২ বছর পূর্বে মধ্যপাড়া ইউনিয়নের ইসলামবাগ গ্রামের আরো এক প্রসূতি নারী হামপাতালটির ডাক্তারদের ভূল চিকিৎসার বলি হয়ে মারা যায়। এছাড়া হাসপাতালটিতে আগত একাধিক রোগীর ভূল চিকিৎসার কারণে শারীরিক অক্ষমতা ও প্রসূতি নারী মৃত্যুর অভিযোগ থাকলেও সেসকল ঘটনা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া হাসপাতালটিতে ১০ সয্যার অনুমোদন থাকলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অনুমোদ ছাড়াই ২৪ সয্যা রেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রামানন্দ গ্রামের বাসিন্দা সবুজ নামে এক ভুক্তভোগী যুবক অভিযোগ করে বলেন, আরাফাত জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার সামসুন্নাহার মনির আচরণ খুবই খারাপ। ওনি রোগীদের সাথে কুকুরের চেয়ে বেশী খারাপ আচরণ করে। সে রোগী না দেখে আগেই অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে দেয়। পরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি যে পরীক্ষা দেন সে পরিক্ষা করানোর কোন প্রয়োজন ছিলো না। আমার স্ত্রী মাথা ব্যাথা নিয়ে আরাফাতে সামসুন নাহার মনির চেম্বারে যায়, আমার স্ত্রীকে না দেখেই সে আগেই ৭-৮ হাজার টাকার পরীক্ষা দেয়। পরিক্ষা করে আসার পর তার কাছে রিপোর্ট নিয়ে গেলে সে রিপোর্ট দেখে বলে আপনার স্ত্রীর লো প্রেশার, মিষ্টি খেলেই ঠিক হয়ে যাবে! যদি আমার স্ত্রীর লো প্রেসারই থাকে তাহলে এতোগুলো টাকার পরীক্ষা করতে দিয়ে শুধু টাকা গুলো খরচ করালো কেন? এছাড়া ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীদের বসিয়ে রাখাসহ এক এক সময় এক এক ফি নেন তিনি। তার সাথে বেশী ফি নেওয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে হাসপাতালের লোকজন বলে টাকার ব্যপারে যারা কথা বলে মনি ম্যাডাম সে রোগী দেখেন না। এ ধরনের ডাক্তার সমাজের জন্য ভয়ংকর। হয় এসব ডাক্তার হাসপাতাল থেকে বিদায় করুক আর না হয় হাসপাতাল বন্ধ করে দি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রসূতি ও গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাক্তার সামসুন নাহার মনির কাছে জানতে তার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে প্রতিবেদকের কন্ঠ শুনে ফোন কেটে দেন।
হাসপাতালরটি মালিক আব্দুর রবের মুঠোফোনে কয়েক দিন ধরে লাগাতার ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায় নি!
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জামশেদ ফরিদীর কাছে জাইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়েছি। স্যার নিজেই তাদের শোকজ করেছেন। আজকে তাদের শোকজের উত্তর দেওয়ার কথা। তারা আজকে স্যারের কার্যালয়েই আছে এখনো। জবাব না পেলে তিনিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com