অতিরিক্ত সিম ব্যবহারজনিত জালিয়াতি, প্রতারণা ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ব্যক্তি পর্যায়ে সিম ব্যবহারের সীমা কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম ব্যবহার করতে পারবেন। আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট) থেকে এই সীমা কার্যকর হবে।
বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই সীমা কার্যকর হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের নামে থাকা প্রায় ৬৭ লাখ অতিরিক্ত সিম বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে দেশে মোট সক্রিয় সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬২ লাখ হলেও প্রকৃত গ্রাহক প্রায় ৬ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহকের নামে পাঁচটি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম ব্যবহার করছেন ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ গ্রাহক এবং ১১ থেকে ১৫টি সিম রয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ গ্রাহকের নামে।
গত সোমবার (৩০ জুন) বিটিআরসির নিয়মিত কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কমিশন জানিয়েছে, যেসব গ্রাহকের নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করে মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাঠানো হবে। অপারেটররা ওই গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে এবং জানতে চাইবে, কোন ১০টি সিম তারা সক্রিয় রাখতে চান। বেশি ব্যবহৃত নম্বর এবং যেসব সিম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে মোবাইল অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা পাঠানো হবে। পাশাপাশি, সিম নিষ্ক্রিয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে অপারেটরদের প্রচার কার্যক্রম চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “এখন থেকে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ১০টি সিম ব্যবহার করতে পারবেন। শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।”
বিটিআরসি আরও জানায়, অতীতে সিম ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে সিমের সংখ্যা সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো একজন গ্রাহকের জন্য সর্বোচ্চ ১৫টি সিম ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালে সিম নিবন্ধন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হলেও সিমের সংখ্যা অপরিবর্তিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত সিম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল, ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে ফাঁদ পাতার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণেই সীমা আরও কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের গত সোমবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সিম ব্যবহারের সীমা কমানোর পাশাপাশি, এক বছর পরপর সিম নবায়নের বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিটিআরসিকে কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসি মনে করছে, নতুন সীমা কার্যকর হলে বেশিরভাগ সাধারণ গ্রাহকের ওপর এর বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে অতিরিক্ত সিমের মালিকদের মধ্যে যাদের কাছে একাধিক সিম মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যবসায়িক কারণে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সঠিক বাছাই করতে হবে। এজন্য সময়মতো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কমিশন।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com