হাবিবুর রহমান,লক্ষীপুর প্রতিনিধিঃ
বিআইডব্লিউটিএ’র ইজারা দেওয়া নৌ-ঘাটের টোল আদায় করতে গিয়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জামায়াতের দুই নেতা অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইজারা বঞ্চিতদের লোকজনসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সংবাদকর্মীদের ভুল তথ্য সরবরাহ করে অপপ্রচারের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে এ হেনস্তা করছেন। শনিবার রাতে উপজেলা সদর হাজিরহাট দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাহেবেরহাট ইউনিয়ন সভাপতি লোকমান হোসেন এবং একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ দুই জামায়াত নেতা জানান, লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে উপজেলার মেঘনা নদীর নবীগঞ্জ হতে পাটারীরহাট এলাকা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌ-ঘাট হিসেবে ইজারা নেন। ইজারাদার হারুনুর রশিদ জেলা শহরের বাসিন্দা এবং জনবল কম হওয়ার কারণে স্থানীয় জামায়াত নেতা লোকমান ও আনোয়ারকে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তারা নিয়ম অনুযায়ী ইজারার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়ে টোল আদায় করে আসছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার সকালে আনোয়ার হোসেন উপজেলার মাতাব্বরহাট নৌ-ঘাটে মেঘনা নদীর চ্যানেল ব্যবহার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির তীররক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক নির্মাণে বালু ও পাথার পরিবহনকারী একাধিক কার্গোজাহাজ ও বাল্কহেডের ব্যবসায়ী জনৈক ইউসুফের নিযুক্ত প্রতিনিধি মো. সাহাদাতের সঙ্গে টোল আদায়ের বিষয়ে আলোচনা করতে যান। এ সময় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আনোয়ার ও ছাত্রদল নেতা রাজু এসে সেখানে হট্টগোল সৃষ্টি করে। ওই ঘাট থেকে তারা কোনো টোল আদায় করতে দিবেন না উল্লেখ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকিও দেন। এনিয়ে বাগ্বিতন্ডা সৃষ্টি হলে শ্রমিকরা কিছুক্ষণ নদীতে থাকা পল্টুনে ব্লক লোড বন্ধ রাখেন। একপর্যায়ে পরে বসে বিষয়টি মীমাংসা কথা বলে তিনি চলে আসলে পুনরায় শ্রমিকরা ব্লক লোড শুরু করেন।
তারা বলেন, ওই নৌ-ঘাট থেকে রাজু ও আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নৌ-যানের মালিক থেকে টোলের নামে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে আসছেন। এখন আমরা ইজারার টোল আদায় করতে গেলে তাদের মুখোশ উম্মোচন হয়ে যায়। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে এবং রাজনৈতিক বিরোধের জেরে ইজারা বঞ্চিতদের সঙ্গে নিয়ে তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তারা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের ভুল তথ্য সরবরাহ করে। সংবাদকর্মীরা সেটিকে চাঁদার দাবিতে নদী বাঁধের নির্মাণকাজ বন্ধ মর্মে ফলাও করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন।
জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কমলনগর ও রামগতিতে নদী বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় কারখানা স্থাপন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্লক সরবরাহ করে আসছে। মাতব্বরহাট নৌ-ঘাট ব্যবহার করে কার্গো জাহাজ ও বাল্কহেড দিয়ে সেই কারখানায় বালু এবং পাথর সরবরাহ করছেন জনৈক মো. ইউসুফ নামে আরেক ব্যক্তি। মূলত, ঘটনার সময় ঘাট ইজারাদারের প্রতিনিধি হিসেবে ওই ব্যবসায়ীর কার্গো জাহাজ এবং বাল্কহেড থেকে টোল আদায়ের বিষয়ে আমার কথা চলছিল। সেখানে নদী বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা বা কাজ বন্ধ করার কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
তারা বলেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী একটি আদর্শিক ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। এজন্য সারাদেশে জামায়াতের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেড়েছে। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই এনিয়ে প্রকাশিত উদ্দেশ্যমূলক সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি চাঁদা দাবি ও নদী বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সংবাদকর্মীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
এদিকে সংবাদে প্রকাশিত বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় লোকজনসহ নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, টোল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে স্থানীয় রাজু ও আনোয়ারের সঙ্গে এক ব্যক্তির বাগি¦ত-ার কারণে কিছুক্ষণ তারা পল্টুনে ব্লক লোড বন্ধ রাখেন। পরে তারা যথারীতি কাজ করেন।
তবে, মাতাব্বরহাট নৌ-ঘাট থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আনোয়ার হোসেন জানান, রাজুসহ তিনি একটি নৌ-পরিবহন কোম্পানীর প্রতিনিধি হিসেবে মাতাব্বরহাট এলাকায় নিয়োজিত। সেজন্য তারা ওইদিন সেখানে গিয়েছেন। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সঙ্গ তারা জড়িত নয়।
নৌ-ঘাট ইজারাদার হারুনুর রশিদ বলেন, জনবল কম থাকায় মাতাব্বরহাট নৌ-ঘাট এলাকায় টোল আদায়ের জন্য লোকমান হোসেন ও আনোয়ার হোসেন নামে দুই ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওই ঘাটে লোড-আনলোডে ব্যবহৃত নৌ-যান থেকে তারা টোল আদায় করবেন এটাই স্বাভাবিক।
এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নিযুক্ত কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি জানান, হারুনুর রশিদের পক্ষে লোকমান হোসেন ইজারার বিপরীতে সকল কাগজপত্র তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ওই কাগজপত্রের বৈধতা থাকায় তাদের টোল আদায়ে কোনো ধরনের বাধা নেই।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খাঁন জানান, মেঘনার ভাঙন থেকে রামগতি-কমলনগরকে রক্ষায় তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। চাঁদা বা টোল আদায়কে কেন্দ্র করে বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে কোনো ঠিকাদার তাদেরকে কিছুই জানাননি। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com