ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১১০ কোটি টাকার ঋণ আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), প্রভাবশালী সিকদার পরিবারের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ মোট ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সুদ-আসলে এই অর্থের পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ২০৭ কোটি ৪২ লাখ টাকারও বেশি।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ঋণ অনুমোদন ও বিতরণে জালিয়াতি, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা ব্যাংককে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।
কীভাবে আত্মসাৎ হলো এ অর্থ
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি সিকদার গ্রুপের কর্মচারী সৈয়দ কামরুল ইসলাম ‘এস. কিউ. ট্রেডিং অ্যান্ড ডেভেলপার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন এবং পরদিনই ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় ১১০ কোটি টাকার ঋণের জন্য আবেদন করেন। প্রতিষ্ঠানটি নবীন গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ২০ দিনের মধ্যে প্রকল্প পরিদর্শন প্রতিবেদন, আইনজীবীর মতামত কিংবা জামানতের মূল্য যাচাই ছাড়াই ঋণ অনুমোদন করা হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ওই ঋণ এক দিনে ১১টি ইন্সট্রুমেন্টের মাধ্যমে বিতরণ করে ন্যাশনাল ব্যাংকের তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে আবার সিকদার পরিবারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সহযোগীদের হিসাবে ফেরত পাঠানো হয়। দুদক বলছে, এভাবেই পরিকল্পিতভাবে ঋণ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
কারা আসামি তালিকায়
মামলায় আসামি করা হয়েছে সিকদার পরিবারের সদস্য রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, মমতাজুল হক সিকদার, লিসা ফাতেমা হক সিকদার ও পারভীন হক সিকদারকে। এ তালিকায় রয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন।
এছাড়া ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, এম. এম. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. জহুরুল হক, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, আতিকুর নেছা, আহমদ মুক্তাদির আরিফ, খন্দকার ইফতেখার আহমদ, ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বদরুন নেছা, মো. ওয়াহিদুল আলম শেঠ, জামাল মোস্তফা চৌধুরী এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবরসহ একাধিক সাবেক পরিচালক ও কর্মকর্তা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মো. সালাউদ্দিন ও সৈয়দ মাহবুব-ই-করিমকেও আসামি করা হয়েছে।
দুদকের পর্যবেক্ষণ
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবীন গ্রাহকের জন্য এত বড় ঋণ অনুমোদন সম্পূর্ণ অনিয়মিত। অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রচলিত বিনিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। দুদক মনে করছে, এ মামলার মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ের প্রভাবশালী পরিবার ও ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম উন্মোচিত হলো, যা ভবিষ্যতে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com