ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে রাজি নেতানিয়াহু, গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা
গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান দু’পক্ষ।
ট্রাম্প বলেন, এটি একটি “ঐতিহাসিক দিন” এবং যুদ্ধ শেষের “ন্যায্যতম পরিকল্পনা”। তার মতে, ফিলিস্তিনিদের অনেকেই শান্তিতে বসবাস করতে চান, তবে তাঁদের নিজেদের ভাগ্যের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি দাবি করেন, হামাসও আলোচনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে, যদিও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
২০ দফার প্রস্তাব অনুযায়ী, চুক্তি কার্যকরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে সব ইসরায়েলি জিম্মি মুক্ত করতে হবে। এরপর ধাপে ধাপে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করবে। একই সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রস্তাবে উল্লেখ আছে, যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদের ক্ষমা করা হবে এবং যারা গাজা ছাড়তে চান, তাদের নিরাপদে অন্য দেশে যেতে সহায়তা করা হবে।
নেতানিয়াহু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা সহজ পথেই চাই, তবে এটি হওয়া জরুরি। যদি হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বা রাজি হয়ে পরে সরে যায়, তবে ইসরায়েল নিজেই নিজের লক্ষ্য পূরণ করবে।” তিনি যোগ করেন, হামাস নিরস্ত্রীকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ হলে ইসরায়েল স্থায়ীভাবে যুদ্ধের ইতি টানতে প্রস্তুত।
তবে এ পরিকল্পনা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। সমালোচকদের মতে, বিদেশি নিয়ন্ত্রণে গাজাকে পরিচালনার প্রস্তাব রাজনৈতিকভাবে জটিল এবং বাস্তবায়ন কঠিন। অনেক ফিলিস্তিনি আশঙ্কা করছেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণের শর্ত আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখা হতে পারে। সেই কারণে হামাসের প্রতিক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, গাজার ভেতরে যুদ্ধ থেমে নেই। সোমবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত আরও ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা নগরীতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৫৫ জন। একই সঙ্গে আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৪ জন। আল-শিফা হাসপাতাল এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বন্দুকযুদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বহু হাসপাতাল অচল হয়ে পড়েছে, ফলে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজামুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নিয়েও নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জার্মানি জানিয়েছে, ইসরায়েল নৌবহরে সহিংস হস্তক্ষেপ করতে পারে। ইতালি ও স্পেন ইতিমধ্যে নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বা ১ অক্টোবরের মধ্যে নৌবহরটি গাজায় পৌঁছানোর কথা।
একদিকে সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনার আলোচনা, অন্যদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণহানি—দুই চিত্রই এখন মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা। আগামী দিনগুলোতে হামাসের অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এই প্রস্তাবের বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com