নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের স্বাস্থ্যসেবা
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে একটি অসন্তোষ বিদ্যমান আছে। এটি স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। সবাই জানত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অদক্ষতা এবং অব্যবস্থায় পরিপূর্ণ। এই খাতটি দুর্নীতি ও লুটপাটের একটি উর্বর ক্ষেত্র। কিন্তু এখানে ঠিক কী ধরণের পুকুরচুরি, নদীচুরি বা সাগরচুরি হচ্ছে সে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ওয়াকিবহাল ছিল না। মোটকথা স্বাস্থ্য বিভাগকে ঘিরে একটি পর্দা আটকানো ছিল। কিন্তু এই পর্দাটি এখন খুলে গেছে। আমরা জানতে পেরেছি যে, স্বাস্থ্যখাতে চরম দুর্নীতি হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুটো অংশ। একটি অংশ হলো সরকারি খাত এবং অন্যটি বেসরকারি খাত। দেশবাসীকে কীভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে সেটা মূলত একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দেশের মানুষ এবং তাদের দ্বারা নির্বাচিত সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। স্বাস্থ্যসেবার প্রধান অংশ হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের জনসাধারণকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা শুরু হয়। যদিও ১৯৭২ সালে ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বেসরকারি উদ্যোগে একটি নতুন ধারার জন্ম হয়। ১৯৮২-এর ‘দি মেডিক্যাল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেজিস্ট্রেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। স্মর্তব্য তখন দেশে সামরিক শাসন চলছে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিপুল বিস্তার ঘটেছে। মোটাদাগে বলা যায় দেশের এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যসেবা সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। বাকি কমবেশি দুই-তৃতীয়াংশ সেবা বেসরকারিভাবে প্রদান করা হয়। দেশের স্বাস্থ্য খাত নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ সমস্যার মূলত দুটি দিক চিহ্নিত করা যায়। প্রথমটি হলো চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট বা ঘাটতি। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট, ফার্মাসিস্ট সংকট, বেড সংকট, ওষুধ সংকট, চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট-এগুলো গণমাধ্যমের নিত্যদিনের খবর। দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থা। মেডিকেল কলেজে ভর্তি জালিয়াতি থেকে শুরু করে ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ানের বদলি-পদায়ন-স্বাস্থ্য খাতের এমন কোনো দিক নেই যা দুর্নীতিতে জর্জরিত নয়। কেনাকাটায় চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেখানো, প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকার পরও দামি যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ করে ফেলা-কোনো কিছুই বাদ পড়ে না দুর্নীতির করাল থাবা থেকে। আমরা মনে করি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থা রোধ করা গেলে বিদ্যমান বাজেট দিয়েও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব। কাজেই দুর্নীতি-অব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার জরুরি ভিত্তিতে। এ জন্য মানসম্মত সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে নিরন্তর নজরদারিও প্রয়োজন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com