গাজামুখী ত্রাণবাহী নৌবহর আটকালো ইসরায়েল, আটক ২০০-র বেশি অধিকারকর্মী
ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে ভূমধ্যসাগরে আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে গাজা থেকে প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দূরে এ অভিযান চালানো হয়। এতে ৩৭টি দেশের দুই শতাধিক অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সুপরিচিত জলবায়ু আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গও।
ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে জানান, আটক হওয়া ১৩টি নৌযানে ২০১ জনের বেশি মানুষ ছিলেন। তাদের মধ্যে স্পেনের ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন এবং মালয়েশিয়ার ১২ জন রয়েছেন। তবে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল অন্তত ১৩টি নৌযান থামিয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে দেইর ইয়াসিন, হিউগা, স্পেক্টার, আদারা, আলমা, সিরিয়াস, আরোরা ও গ্রান্ডি ব্লু নামের নৌযানও রয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা একটি আন্তর্জাতিক মানবিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ভেঙে গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসাসহ জরুরি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। এই নৌবহরে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী রয়েছেন। প্রায় ৪৪টি দেশের পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।
নৌবহরের যাত্রা শুরু হয় গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে। পরবর্তীতে তিউনিসিয়া, ইতালির সিসিলি এবং গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এতে যুক্ত হয়। মোট ৪০টির বেশি বেসামরিক জাহাজ নিয়ে গঠিত এই বহর বর্তমানে বিভক্ত হয়ে গাজামুখী যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। মুখপাত্র সাইফ বলেন, “আমাদের প্রায় ৩০টি নৌযান এখনো ইসরায়েলি সামরিক জাহাজের বাধা অতিক্রম করে উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অনুপ্রাণিত এবং অবরোধ ভেঙে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।”
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযান ‘নিরাপদে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে’ এবং যাত্রীদের একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা অভিযোগ করে, এই ফ্লোটিলা একটি ‘আইনসম্মত নৌ-অবরোধ’ ভাঙার চেষ্টা করছে। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেছে, মানবিক সহায়তার অনুমতি আন্তর্জাতিক আইনে স্পষ্টভাবে স্বীকৃত।
ইসরায়েলি নৌবাহিনী শুধু নৌযানগুলো আটক করেই ক্ষান্ত হয়নি; তারা ফ্লোটিলার কিছু জাহাজের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা জ্যাম করে দিয়েছে এবং জলকামান দিয়ে আক্রমণও চালিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই বিশ্বের নানা শহরে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। মাদ্রিদ, মেক্সিকো সিটি, বুয়েনস এইরেস ও বোগোতায় বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আয়োজকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং ‘নির্লজ্জ বেপরোয়ামূলক কর্মকাণ্ড’। তাদের দাবি, গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বব্যাপী সংহতির অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com