রপ্তানি আয় বাড়লেও বাজার সমপ্রসারণে ব্যর্থতা: বিশেষজ্ঞদের উদ্বে
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে সামান্য হলেও বৃদ্ধি হয়েছে, তবে বাজার সমপ্রসারণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, আয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের দিকে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট কয়েকটি বাজারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হওয়ায় ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হতে পারে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের পরিসংখ্যান
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ রপ্তানি আয় করেছে ৮৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত একাই মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি অবদান রেখেছে। তবে বাজারে বৈচিত্র্য আনতে নতুন উদ্যোগগুলোর ফলাফল তেমন আশাব্যঞ্জক হয়নি।
নির্দিষ্ট বাজারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা
বাংলাদেশের রপ্তানি আয় একদিকে বেড়েছে, তবে অধিকাংশ রপ্তানি মার্কেট এখনো পুরনো বাজারগুলির ওপরই নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য—এই চারটি দেশেই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন বাজারের সন্ধান করতে না পারলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশের জন্য সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা ও বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ বাড়ানোর প্রয়োজন। তবে, ভারত, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কিছুটা প্রবেশাধিকার থাকলেও তা সীমিত আকারে।
রপ্তানি বৈচিত্র্য: সংকটের কারণ
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৬৯.৬৯ শতাংশ এসেছে মাত্র ১০টি দেশ থেকে। এই সংখ্যা থেকে সহজেই বোঝা যায়, বাজার বৈচিত্র্যের অভাব দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি খাতের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের জন্য গবেষণা, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির স্বাক্ষরে গতি বৃদ্ধি করার প্রয়োজন।
নতুন সম্ভাবনা: কৃষি, চামড়া, আইটি এবং আরও অনেক কিছু
তবে, শুধুমাত্র তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর না থেকে বাংলাদেশে অন্যান্য খাতেও রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিপণ্য, চামড়া, ওষুধ, আইটি সেবা এবং হালকা প্রকৌশল খাতগুলোতে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এসব খাত এখনও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে প্রবেশ করতে পারেনি।
উদ্বেগ ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং শুল্ক ও নীতি পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজার বৈচিত্র্য না আনলে, সামান্য বৈশ্বিক সংকটেই রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে। ফলে, রপ্তানি বাজারে নতুন পথ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য রপ্তানি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই খাতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বাজার বৈচিত্র্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি, সরকারের বাণিজ্য নীতিতে গতি আনতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com