বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে মেহেরপুরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক | মেহেরপুর | মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর বঞ্চিত জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকরা মঙ্গলবার সকাল থেকে গাংনী শহরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ শুরু করেন। পরিস্থিতি সহিংস রূপ নিলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
মনোনয়ন ঘোষণার পরই উত্তেজনা
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৮ আসনের প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে মেহেরপুর-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনও এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে তার সমর্থকেরা সেই রাতেই আমজাদ হোসেনকে এলাকায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।
দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১০
মঙ্গলবার সকাল থেকে গাংনী শহরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, হামলা ও ভাঙচুর হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন।
সংঘর্ষকারীরা গাংনী বাজারের একাধিক হোটেল, দোকান ও বিএনপি প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, “শহর কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, শতাধিক দোকান বন্ধ হয়ে যায়।”
উভয় পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ
বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেন বলেন,
> “মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে বঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা এলাকায় উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টি করছে। মঙ্গলবার সকালে আমি এলাকায় গেলে তারা ইটপাটকেল ছোড়ে, অফিস ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। আমি আমার কর্মীদের সংযমের আহ্বান জানিয়েছি।”
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন অভিযোগ করেন,
> “দলীয় মনোনয়নের নামে অবৈধ প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এই মনোনয়ন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন সেনাবাহিনী
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন,
> “বিএনপির দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”
গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
> “দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে কোনো অঘটন এড়াতে পুলিশ শহরে টহল দিচ্ছে,” বলেন তিনি।
চার নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
সংঘর্ষের পরদিন বুধবার (৫ নভেম্বর) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে চার নেতাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন—
জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন,
গাংনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আফাজ উদ্দিন কালু,
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাউসার আলী,
গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন মেঘলা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
> “গাংনীতে সহিংসতা, হানাহানি ও পার্টি অফিস ভাঙচুরসহ জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
দলীয় সংকটের ইঙ্গিত
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মেহেরপুরের এ সংঘর্ষ বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। তাদের মতে, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ঐক্যের অভাব থাকলে তা নির্বাচনী প্রস্তুতি ও মাঠ পর্যায়ের সংগঠনকে দুর্বল করে দিতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com