দেশের শিল্পখাতে টানা ধস : এক বছরে বেকার ১৫ লাখের বেশি শ্রমিক
দেশে কর্মসংস্থানের সংকট দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত এক বছরে মিল-কারখানা স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা না যাওয়ায় প্রতি মাসেই চাকরি হারাচ্ছেন প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার শ্রমিক। এ হিসাবে প্রতিদিন কাজ হারাচ্ছেন গড়ে চার হাজারেরও বেশি কর্মজীবী মানুষ। অর্থনৈতিক মন্দা, গ্যাস-জ্বালানি সঙ্কট এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশের শিল্প-কলকারখানাগুলো আজ সংকটাপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
বিজিএমইএ–র তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ২৫৮টি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য খাতসহ মোট চার শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় কমপক্ষে ১৫ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে নতুন বিনিয়োগ না হওয়ায় কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়া বহু কারখানাও আর চালু হচ্ছে না। ফলে অনেক বেকার শ্রমিক জীবিকা হারিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন, যা সমাজে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
এদিকে দেশের অর্থনীতি আগের সরকারের সময় থেকেই চাপে থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি আরও বেশি নাজুক হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিনিয়োগ বাড়বে—এমন প্রত্যাশা থাকলেও তা পূরণ হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও নতুন বিনিয়োগ হয়নি, বরং আরও বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে শ্রমিক অসন্তোষ দ্রুত বাড়ছে।
গত এক বছরে গ্যাস সঙ্কট, নির্মাণসামগ্রীর কম চাহিদা এবং অর্ডার কমে যাওয়ার কারণে ১৩টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, স্টিলমিল ও প্যাকেজিং কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ৭০টি কারখানায় ৩১৫ বার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিলগুলো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকল বন্ধ হয়ে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বহুবার টেন্ডার আহ্বান করা হলেও এসব মিল পুনরায় চালু হয়নি।
গাজীপুর অঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার শিল্প কারখানার মধ্যে গত এক বছরে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানার শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন বা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের কারণে নয়—করোনা মহামারির পর থেকেই পোশাক খাত ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ব্যাংক ঋণে অনীহা, সুদের হার বৃদ্ধি, অর্ডার কমে যাওয়া এবং গ্যাস সঙ্কট পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে।
অন্যদিকে বিজিবিএ সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল জানান, ক্রমাগত কারখানা বন্ধ ও উৎপাদন হ্রাসের কারণে বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। গত দুই মাসে রফতানি আয় ৫ থেকে ৬ শতাংশ কমেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রফতানিমুখী শিল্প বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পোশাক খাত বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকার গঠন না হলে শিল্প খাতের স্থবিরতা কাটবে না বলে তিনি মনে করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com