সম্পাদকীয় কলামঃ চলমান করোনাভাইরাসের মহামারিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। সব দেশই বিপর্যস্ত। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। রপ্তানি বাণিজ্য কমে গেছে। সংকুচিত হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারও। শিল্প-কারখানা ঘুরে দাঁড়াতে চাইলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর নতুন করে সংকটে পড়তে হয়েছে অনেক উদ্যোক্তাকেই। লোকবল কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে ছোট অনেক কারখানা। অনেক কারখানা রয়েছে বন্ধ হওয়ার পথে। এই অবস্থায় গত বছর সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা ও কিছু নীতি সহায়তা উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু করোনার নতুন ঢেউয়ে আবার বিপর্যয়ের মুখে চলে এসেছে কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এবার ঘোষণা করা হয়েছে নতুন পাঁচটি প্রণোদনা প্যাকেজ। ব্যবহার করা হবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জারি করা লকডাউনের বিধি-নিষেধের মধ্যে কাজ হারিয়ে সংকটে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায়। করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় সরকার তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় নিম্ন আয়ের ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন শ্রমজীবী নগদ আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাবেন। উপকারভোগীদের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন দিনমজুর, দুই লাখ ৩৫ হাজার ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫০ হাজার ৪৪৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং এক হাজার ৬০৩ জন নৌপরিবহন শ্রমিক রয়েছেন। শহর এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় ২৫ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন সারা দেশে ৮১৩টি কেন্দ্রে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর আওতায় দেওয়া হবে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ১৪ হাজার মেট্রিক টন আটা। সে জন্য এ প্যাকেজে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৩৩৩-এ ফোন করলে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া অব্যাহত রাখতে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় কর্মসৃজনমূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিতে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যটন খাতের হোটেল/মোটেল/থিম পার্কগুলো যাতে তাদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারে, সে জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে তাদের ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ জোগাতে ঋণ দেওয়া হবে। সে জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। গত বছর সরকার ঘোষিত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়ন হয় ১৬টি প্যাকেজের ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। ছয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করছে। দেশে উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছিল, করোনা মহামারি তাতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমাদের আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সর্বোত্তম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। প্রণোদনার অর্থ নিয়ে যেন কোনো ধরণের নয়-ছয় না হয় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে। প্রণোদনার অর্থ প্রকৃত হকদারদের মধ্যে বন্টিত হলে, আমরা মনে করি, দেশের মানুষ চলমান এই বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com