এম.জাফরান হারুন, , পটুয়াখালী:: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবু ইউসুফ সিকদারের মাদ্রাসা পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মোসাঃ হালিমা আক্তার আত্মহত্যা করেছে সবাই জানান থাকলেও অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে অন্য রকম রহস্য সহ আলামত।
হালিমা আক্তারের বাবা আবু ইউসুফ সিকদারের লিখিত "মেয়ে আমার আত্মহত্যা করেনি তাকে হত্যা করা হয়েছে" এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালালে বেড়িয়ে আসে রহস্য সহ পাওয়া গেছে একাধিক আলামত।
কয়েকদিন ধরে অনুসন্ধান চালালে জানা যায়, হালিমা আক্তার ঢালী আছিয়া খাতুন আলিম মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালীন সময় থেকে নাজিরপুর-তাতেরকাঠি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ছহিস্যা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ কাসেম হাওলাদারের ছেলে মোঃ নোমান হাওলাদার (২০) এর সাথে নোমানের খালাতো ভাই মদনপুরা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মোস্তফা হাওলাদারের ছেলে কাওছার হাওলাদারের সহযোগিতায় প্রায় দেড় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। সম্পর্কের খাতিরে প্রায়ই প্রেমিকার সাথে দেখা করতে মাদ্রাসায় আসতো নোমান। মাদ্রাসার পাশেই খালা বাড়ি থাকায় সেখানে প্রায়ই আসা যাওয়া সহ থাকতো নোমান। খালাতো ভাই কাওছারের সহযোগিতা নিয়ে আবার প্রায়ই প্রেমিকা হালিমার বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করতো তারা। এভাবেই চলতে থাকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক।
হঠাৎ প্রেম নেওয়া দেওয়া নিয়ে মনমালিন্য তাদের মধ্যে দেখা দিলে ঘটনার তারিখ গত রোজ: বৃহস্পতিবার ২৩শে জুন-২০২২ইং দিবাগত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে হালিমা আক্তারের পরিবারের ভাষ্যমতে হালিমার মা আয়শা বেগম পাশের ঘরে টিভি দেখার জন্য যান। সাথে বড় মেয়েও টিভি দেখতে যান। এদিকে মেজো মেয়ে হালিমা আক্তার পড়ার টেবিলে পড়ালেখা করছেন। বাবা দিনমজুর হওয়ায় সারাদিন কাজকর্ম শেষে ঘরের হাতিনার চৌকিতে গা হেলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ হালিমার চাচাতো বোন মীম তার চাচী, চাচাতো বড় বোনকে জানান, আমার ফোনে ফুফাতো ভাই রহমান ফোন দিয়ে বলছে হালিমা নাকি গলায় ফাসি দিচ্ছে বলে তারাতারি আসো বলে তাদের নিয়ে ঘরের রান্না ঘরে আসামাত্র দেখতে পায় হালিমা আড়ার সাথে তার গায়ের ওড়না দিয়ে ঝুলে আছে এবং পায়ে, হাতে, গায়ে সহ পড়নের জামাকাপড়ে কাদা লেগে আছে। এদিকে ডাকচিৎকার শুনে হালিমার বাবা সহ পাশের ঘরের লোকজন এসে দ্রুত গলায় ফাঁস থেকে নামানো হয়। তখন ভীষণ অসুস্থতা দেখে পরিবারের লোকজন হালিমার কাদামাখা জামাকাপড় খুলে ভালো জামাকাপড় পড়ানোর পূর্বে ঘরের পিছনে রান্না ঘর তার পিছনে পুকুর তার পাড়ের উত্তর-পশ্চিম কোনায় খেরের কুড়ের সামনে বাবা সহ অন্য অন্য লোকজন গিয়ে দেখে হালিমার পায়ের জুতা পড়ে আছে এবং একটি মানুষ কে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসার মতো দাগ পড়ে আছে। যে ঘটনার স্বত্যতার স্বীকারোক্তি দেন অনুসন্ধান সরেজমিনে ঘটনাস্থলে থাকা পরিবার সহ অন্য অন্য লোকজন।
হালিমার অবস্থা খুব খারাপ দেখে দ্রুত বাউফল হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে ওই সময় জরুরি বিভাগের ডাক্তার অবস্থা ভালো না দেখে দ্রুত বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তির কয়েক মিনিট পরপরই হালিমা মারা যান। পরবর্তীতে হাসপাতাল মর্গে হালিমার পোস্টমর্টেম করে লাশ পাঠিয়ে দেন এবং পরিবারের লোকজন লাশ এনে দাফন কাফন করেন।
অনুসন্ধান সরেজমিনে হালিমার বাবা আবু ইউসুফ সিকদার জানান, দাফন কাফনের পরদিন আমার আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে রাতের দিকে বাউফল থানায় গিয়ে ওসি স্যারকে বিষয়টি জানালে তিনি পোস্টমর্টেম রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন এবং বলেন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমাদের পাঠিয়ে দেন। কিন্তু যতোদিন যাচ্ছে ততই আমি সহ আমার পরিবার আইনি অনিশ্চয়তা ভূগছি। প্রেম সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেনি। যাহার একাধিক আলামত আছে। দয়া করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন বলে আকুতি করে জানান তিনি।
অনুসন্ধান সরেজমিনে প্রথম সংবাদ দাতা হালিমার চাচাতো বোন মীম জানান, হালিমা গলায় ফাঁসি দিচ্ছে এমন কথা আমার ফুফাতো ভাই রহমান আমার কাছে ফোন দিয়ে বললে তা আমি সবাইকে জানাই।
সরেজমিনে রহমান জানান, আমার ফোনে 01627215755 নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে হালিমা গলায় ফাঁসি দিচ্ছে বলে ফোন কেটে দেয় তাই আমি আমার বাড়ি বাউফল ইউনিয়নের অলিপুরার বাড়িতে থাকায় দ্রুত মীমকে ফোন দিয়ে বলেছি। পরে মিলিয়ে দেখি এ মোবাইল নাম্বার হালিমা যে ছেলের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত সেই ছেলে নোমানের মোবাইল নাম্বার।
আপনার মোবাইল নাম্বার পেলো কিভাবে নোমান এমন প্রশ্নের উত্তরে রহমান বলেন, আমি প্রায়ই আমার মামা বাড়িতে আসা যাওয়া করতাম। তখন হালিমা আমার ফোন দিয়ে ওই ছেলের সাথে কথা বলতো।
অনুসন্ধান সরেজমিনে নোমানের খালাতো ভাই কাওছার হাওলাদারের বাড়িতে তথ্যের জন্য গেলে প্রথমে কাওছারের বাবা প্রতিবেদককে কাওছার বাড়ি না বলে চলে যান এবং কাওছার তার ঘরে আছে তা প্রতিবেদক নিশ্চিত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কাওছার সামনে এসে বলেন, আমি নোমানের কোনও সহযোগী না। এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমি আরও হালিমার মৃত্যুর খবর শুনে তাদের এলাকায় গেলে আমাকে তারা অপমান করেন।
তাহলে হালিমা আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে কাওছার বলেন, সেটা খালাতো ভাই নোমান জানে আমি কিছু বলতে পারবোনা বলে চলে যান।
ততক্ষনাত অনুসন্ধান সরেজমিনে নোমান হাওলাদারের বাড়িতে গেলে নোমানের মা জানান, নোমান ঢাকা চলে গেছে সে ঢাকাতে চাকুরী করে। তখন ঘটনার কথা খুলে বললে তিনি জানান, এব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা। কিন্তু পাশে থাকা তাদের বাড়ির খলিল নামে একজন তখন বলেন, জানিনা বললে ভূল হবে তবে আমরা শুনেছি এমন ঘটনা। প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যে তখন খলিল বলেন, আপনাদের সাথে নোমানের বড় ভাই পরে কথা বলবে বলে আর কোনও কথা বলেননি তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com