এম জাফরান হারুন, , পটুয়াখালীঃ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের সামনে খাল রক্ষার দাবি করেন মোঃ মাকসুদুর রহমান তালুকদার নামে এক বৃদ্ধ। পরে পটুয়াখালীর পৌরশহরের শ্মশানে ওই বৃদ্ধের লাশ পাওয়া যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে ওই বৃদ্ধের পরিবার একটি হত্যা মামলা করেন। তাই ঘটনার ৪১ দিন পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার (১৮অক্টোবর) সকালের দিকে মৃতদেহটি কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।
পরে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বুধবার (১৯ অক্টোবর) লাশের ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী হাসপাতাল মর্গ থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
লাশটি দাফন করা হয়েছিল পটুয়াখালী পৌর এলাকার কবরস্থানে। নিহত মাকসুদুর রহমান পৌরশহরের কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগে মামলার পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করেছে সিআইডি পুলিশ।
লাশ উত্তোলনের কাজ তদারকি করেন পটুয়াখালীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল হাসান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পটুয়াখালী সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, পটুয়াখালী সদর থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মামলার বাদী এনাম হক ওরফে নাসির।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর আগে গত ৩ অক্টোবর মরদেহ উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু পটুয়াখালী হাসপাতালে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় লাশ উত্তোলন করা হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিষয়টি পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান ওই দিন লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করেন।
ওই ঘটনার পর ৬ অক্টোবর আদালত শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। আদালতের এই আদেশটি ১৫ অক্টোবর শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান লিখিতভাবে হাসপাতালের অধ্যক্ষকে জানান।
কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। সে অনুযায়ী বৃদ্ধের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার রেফায়েতুল হায়দারকে নির্দেশ দেন।
ডা. রেফায়েতুল হায়দার বলেন, মঙ্গলবার বৃদ্ধের মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। পরে মৃতদেহ পটুয়াখালী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। বুধবার মৃতদেহ বরিশালে এনে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী গত ৬ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী পৌরসভার সুতাখালী খাল দেখতে যান। তখন খাল রক্ষার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসেন বৃদ্ধ মাকসুদুর রহমান তালুকদার। এ সময় চেয়ারম্যানের সামনেই ওই বৃদ্ধকে হুমকি দেন পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ।
মেয়রের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ওই বৃদ্ধের ভাতিজা এনামুল হক ওরফে নাসিরকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। ওই ঘটনার পরে মাকসুদুর রহমান তালুকদারের লাশ পাওয়া যায় খালের পারের শ্মশানের ভেতর। এ নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।
পরে ১৫ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাতিজা এনামুল হক। বিচারক মো. আশেকুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সিআইডিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন পৌরসভার কাউন্সিলর এস এম ফারুক, মো. এনামুল, মো. নিজাম, অপু শিকদার, আমিুল ইসলাম মামুনসহ আরো ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com