মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ,ঘোড়াঘাট ( দিনাজপুর)
কীটনাশক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণে নানা ধরণের আইন রয়েছে। এ সব আইনে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। তবে সে সবের প্রয়োগ না থাকায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে কীটনাশক দ্রব্য। পুরো উপজেলা জুড়ে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে কীটনাশকের দোকান। এদের অনেকের নেই বৈধ কোন লাইসেন্স। গ্রামগঞ্জে অনেকে মুদির দোকানেই কীটনাশক ও সার বিক্রয় করছে।
এ সব দোকানে হরহামেশাই মিলছে কীটনাশক সহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। কৃষক ও খামারীরা প্রয়োজনের অধিক কীটনাশক এ সব দোকান থেকে কিনছে। ব্যবহার শেষে এ সব কীটনাশকের অবশিষ্ট অংশ বাড়িতে যত্রতত্র ফেলে রাখছেন তারা। ফলে হুমকিতে পড়ছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ। আবার এ সব কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে অনেকে।
ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী এই উপজেলায় লাইসেন্সধারী কীটনাশক বিক্রেতা আছে ১৩৬ জন। তার মধ্যে পাইকারী বিক্রেতা ১১ জন এবং খুচরা বিক্রেতা ১২৫ জন।
দিনাজপুরের প্রত্যন্ত একটি উপজেলা ঘোড়াঘাট। ছোট এই উপজেলা চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত মোট আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। তার মধ্যে পুরুষ ৭ জন এবং নারী ৯ জন। এ সব আত্মহননকারীদের মধ্যে বিভিন্ন কীটনাশক এবং পুকুরে ব্যবহৃত ও ইঁদুর মারা গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছে ৪ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এছাড়াও এই সময়ের মাঝে আরো ১৩ জন নারী ও ৯ জন পুরুষ কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। যথা সময়ে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করায়, তারা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া এবং কীটনাশক খেয়ে চিকিৎসা শেষে বেঁচে যাওয়া সকলেই পারিবারিক ও মানষিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। পরিবারগুলো বলছে তারা রাগের বশে বাড়িতে হাতের নাগালে থাকা কীটনাশক ও গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে।
বিষয়টি নিয়ে ঘোড়াঘাটের সচেতন নাগরিক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমালোচনার তীর ছুঁড়ছে উপজেলা কৃষি বিভাগের দিকে। তারা বলছে কৃষি বিভাগের তদারকির অভাবে কীটনাশকের দোকান গুলোতে হরহামেশাই যেকোন বয়সের ব্যক্তি কীটনাশক দ্রব্য ক্রয় করতে পারে। ফলে এ সব কীটনাশক দ্রব্য আত্মহত্যার কাজে ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১৯ সালে সরকার মাঠ পর্যায়ে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি বিবেচনায় কৃষি কর্মকর্তাদের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে কীটনাশক ক্রয় বিক্রয়ের পরিকল্পনা ছিল। এই প্রকল্পটি সারা দেশে বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের। তবে উপজেলা পর্যায়ে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে কীটনাশক ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণে লাগাম টানা সম্ভব।
ঘোড়াঘাট থানার ্অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু হাসান কবির বলেন, ‘প্রতিমাসেই এই উপজেলায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য পান করে আত্মহত্যা করেছে। আমরা বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াচ্ছি। গ্রামে গ্রামে উঠোন বৈঠক করছি এবং স্কুল-কলেজে সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে বিষপান করা রোগী ভর্তি হয়। এদের অনেকে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। যথা সময়ে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে প্রযোজনীয় চিকিৎসায় রোগীর প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিষক্রিয়া রোগীর শরীরে পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ায় এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে ভেন্টিলেটর সুবিধা না থাকায় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।’
ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ কীটনাশক ক্রয়-বিক্রয় করে তবে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ সব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা করে থাকি। তবে কোন কৃষক যদি কীটনাশক কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে ফেলে রাখে। আর সেটা ব্যবহার করে যদি কেউ আত্মহত্যা করে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। এটি কৃষকের অসচেতনতার কারণে ঘটছে। কিটনাশক ক্রয়-বিক্রয়ে তেমন কোন আইন নেই। যে কেউ চাইলেই পরিমান মত কীটনাশক দোকান থেকে কিনতে পারেন।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আল আমিন খান , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ নজরুল ইসলাম,
সার্বিক যোগাযোগ: 01867-243396 ই-মেইলঃ dailycrimebangla@gmail.com