আবুল বাশার ভোলা,সংবাদদাতা
ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষী বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসা। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। দাখিল থেকে কামিল স্নাতকোত্তর শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চালু থাকায় বর্তমানে এটি জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করে এবং বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির মূল ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এলাকাবাসীর দান ও মাদ্রাসার নিজস্ব অর্থায়নে সত্তর-আশির দশকে নির্মিত ভবনগুলো এখন প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম। ভবনের ছাদে ফাটল, দেয়ালে চিড়, দরজা-জানালার ক্ষতি, এমনকি ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ায় শিক্ষার্থীরা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করে। দুই বছর আগে ছাদের অংশ খসে পড়লে চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছিল। কয়েকদিন আগেও প্লাস্টার খসে পড়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
৬ষ্ট শ্রেনি শিক্ষার্থী রিযাজ বলেন, “আমরা প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে ক্লাসে পাঠদান করি। নতুন ভবন ছাড়া এ অবস্থায় পড়াশোনা চালানো সম্ভব নয়। আলিম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহফুজ দাবি, “শিক্ষকরা আন্তরিক হলেও ভবন ধসে ভবনের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা যায় না।”
হেড মুহাদ্দিস হাবিবুর রহমান আল জাজিরি জানান মাঝে মাঝে মসজিদে ক্লাশ নিতে হয় শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানটির এই বেহাল দশা থেকে মুক্তি লাভে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন।
অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবিএম আহমেদ উল্লাহ আনসারী জানান, রুম সংকটের কারণে পাঠদানে ব্যাবহত হচ্ছে।যাহা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞানাগার ভবন ও ছাত্রাবাসের জানালা-দরজা নষ্ট, দেয়ালের রং উঠে গেছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে অনুভূত হচ্ছে। স্থানীয়ারা জানান এই মাদরাসাটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত এ প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় হাজারো মানুষ ঝুঁকির মুখে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আ. সাত্তার জানান, ভবনটি আর সংস্কারযোগ্য নয়, বরং নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান উজ্জামান বলেন-“ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসা রয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুত কাজ শুরু হবে।”
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর দাবি, ভোলা জেলার ঐতিহ্যবাহী বোরহানউদ্দিন কামিল এ মাদ্রাসাকে টিকিয়ে রাখতে এবং নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন ভবন সংস্কার করা দরকার।