এসএম আবুল বাশার ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধ :- ফরিদপুরের শহর সংলগ্ন আলিয়াবাদ ইউনিয়নে বায়তুল আমান-সাদিপুর সংযোগ সড়ক কাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশ ধ্বসে গেছে। রোববার (১৯ জুলাই) সকাল পৌনে সাতটার দিকে পানির তিব্র স্রোতে মুহুর্তের মধ্যে ওই বাঁধের বিস্তির্ণ অংশ ধ্বসে যায়। এতে একটি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে পানির স্রোতের তোড়ে। চোখের সামনে বসতবাড়ি এভাবে পানিতে ভেসে যেতে দেখে অসুস্থ্য হয়ে পড়া ওই বাড়ির মালিককে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আকস্মিক ওই বন্যার পানি প্রবেশ করে ওই বাঁধের তীরবর্তী কমপক্ষে পঞ্চাশটি বাড়ি নতুন করে প্লাবিত হয়ে গেছে। এসব পরিবারের লোকেরা সড়কের উপড়ে গবাদি পশু ও আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে নারী, শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ফরিদপুরের গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি আজ রোববার সকালে ১ সেন্টিমিটার কমে ৯.৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় যা বিপদসীমার ১০৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো রোববার পর্যন্ত জেলার প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। জেলা সদরের ডিক্রিরচর, নর্থচ্যানেল, আলিয়াবাদ ও চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন ছাড়াও, চরভদ্রাসন উপজেলা, সদরপুর উপজেলা ও ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। জেলার পদ্মাার অববাহিতায় বিস্তির্ণ ফসলের জমি ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্নস্থানে সাপের উপদ্রব দেখা গেছে। সেখানে মানুষ ও গোখাদ্যের সংকট চলছে। ফরিদপুর চরভদ্রাসন আঞ্চলিক সড়কে সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পদ্মার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। জেলার মধুমতির নদীর আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান জানান, গত কয়েকদিনযাবত পদ্মার পানি তীর উপচে আশেপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করেছে। একারণে সাদিপুরের ওই সড়ক কাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পদ্মার দিকের অংশে পানি এসে জমে বাড়তে থাকে। আজ সকাল পৌনে সাতটার দিকে আকস্মিকভাবে বিল গজারিয়া পয়েন্টে পানির তোড়ে বাঁধ ধ্বসে যায়। এসময় বাঁধের তীরবর্তী বাসিন্দা আব্দুস সালাম (৫৮) এর একটি টিনের চারচালা ঘর চোখের নিমিষে ধ্বসে পানিতে ভেসে যায়। আব্দুস সালামের স্ত্রী নাজমা বেগম (৫০) জানান, পানিতে তাদের বাড়িঘর ও গরু-ছাগল, হাস-মুরগিও বেসে গেছে। এসব দেখে তার স্বামী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। আলিয়াবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার হতেই এলাকায় পানি বাড়তে থাকে। এরাকাবাসী সাদিপুর স্কুলের সামনে পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করে। তিনি জানান, শুক্রবার ভাজনডাঙ্গায় সড়কের উপর দিয়ে পানি উপচে এপাড়ে আসে। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয়রা বাঁধের কয়েকটি স্থানে মেরামত করে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করেছিল। আবু ইসহাক (৫৯) নামে ওই ইউনিয়নের বিলগাজরিয়া গ্রামের বাসিন্দা বলেন, পদ্মার তীরে পাঁচ বিঘা জমিতে তিনি তিল ও পাট বুনেছিলেন। সবই তলিয়ে গেছে। কেউ কোন সহায়তা করেনি। রাসেল আহমেদ রানা (২৬) নামে এক যুবক বলেন, বন্যার পানি আসার পর এলাকায় দু’টি পরিবারেকে টিন দেয়ার কথা শুনেছি। ফরিদপুর থেকে কর্মকর্তারা এসে কয়েকটি পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছে। এর বাইরে কাউকে ত্রাণ দিতে দেখিনি। বর্তমানে সাদিপুরে আবাবীল কিন্ডার গার্ডেন হতে কাদিরের বাজার পর্যন্ত এলাকায় আঞ্চলিক সড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আলিয়াবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন অবশ্য এ পর্যন্ত তিনদফায় নয়শ’ পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বাঁধের কয়েকটি স্থান মেরামত করেছিলাম তবে ধ্বসে যাওয়া স্থানটি তখন চোখে পড়েনি। পাউবো বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করেছে। আশা করছি শহরে পানি ঢুকবে না। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, ২০০৬ সালে গৃহিত ফরিদপুর-বরিশাল বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় আলিয়াবাদ ইউনিয়নের ওই বাঁধ কাম সড়কটি তৈরি করা হয়। ছায়াঘেরা ওই সড়কটি শহরতলীর সাদিপুর ও বায়তুলআমান সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পদ্মা নদী উপচে আসা পানির তোড়ে রোববার সকালে সেটির একস্থানে ধ্বসে যায়। তিনি জানান, খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাঁধটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে। রোববারের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। এতে শহরে বন্যার পানি প্রবেশের আশংকা নেই বলেও তিনি জানান। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন হতে দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দিয়ে পৌছে দেয়া হচ্ছে। জেলা সদর থেকে চরভ্রদাসন ও সদরপুর উপজেলায় যাতায়াতের আঞ্চলিক সড়কের কিছু স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই সড়কে যান চলাচলের উপযোগী করতে সড়ক বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।