নিজস্ব প্রতিবেদক
রিয়াদ, ৬ অক্টোবর, ২০২৫
বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আজ (৬ অক্টোবর) রিয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও অভিবাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরব সরকারের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী উপস্থিত ছিলেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে সাধারণ শ্রমিক, দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী নিয়োগের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। এটি বিশেষভাবে প্রবাসী কর্মীদের অধিকার সুরক্ষা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার দিক থেকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ-সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো সাধারণ কর্মী নিয়োগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি। এর আগে, ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাই ও স্বীকৃতি সংক্রান্ত দুটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সাধারণ কর্মী নিয়োগে এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি।
কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা
চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুটি দেশের যৌথ উদ্যোগে কর্মীদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই, আকামা নবায়ন এবং এক্সিট ভিসা সম্পর্কিত বিষয়গুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন হবে। প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই চুক্তির স্বাক্ষরের পর সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে এবং নিয়োগকর্তারা আকামা নবায়ন, এক্সিট ভিসা প্রদানসহ সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।
কর্মী কল্যাণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন
সৌদি আরবের মানবসম্পদ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার অংশীদার। এই চুক্তি শুধু নিয়োগ নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।” তিনি কর্মী কল্যাণ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মন্ত্রণালয়কে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
নতুন উদ্যোগ
এই চুক্তির অংশ হিসেবে সৌদি আরবে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, কর্মী নিয়োগে ডিজিটাল যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু, নারী কর্মীদের সুরক্ষা এবং অবৈধ দালাল চক্র দমনে যৌথ মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া, কর্মীদের জন্য একটি যৌথ অনলাইন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে, যেখানে নিয়োগ ও কর্মচুক্তির তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট করবে।
ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তি কার্যকর হলে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত আছেন এবং তারা বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
এই ঐতিহাসিক চুক্তি বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, এমন প্রত্যাশা রয়েছে।