
পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে প্রভাব নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্ববাজারে ও দেশীয় পাইকারি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম টানা কমলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না। ফলে সাধারণ ভোক্তারা দরপতনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনের মনিটরিং কার্যক্রমে শিথিলতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতাই এ অবস্থার জন্য দায়ী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে দাম সমন্বয়ের বিষয়টি প্রশাসনের তৎপরতার ওপর নির্ভর করে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে এক মুহূর্ত দেরি করেন না, কিন্তু দাম কমাতে গড়িমসি করেন। রমজান ও কোরবানির ঈদ ছাড়া সারা বছর বাজার তদারকি কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকে। ফলে খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরের পতন আড়াল করে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করছেন।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে মোটা মসুর ডালের দাম প্রতি কেজি ৮১–৮২ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৮৮–৯০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখনও এটি ১০৫–১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ২৫–৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করছেন খুচরা বিক্রেতারা। একইভাবে চিনির পাইকারি দাম ৯১–৯২ টাকা হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১০২–১০৫ টাকায়।
মুগ ডাল, ছোলা, ছোলার ডাল, খেসারি, চিনি, আটা-ময়দা ও ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই একই চিত্র। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১৪৮ টাকায়, মুগ ডাল ১৪০ টাকায় এবং ছোলা ৯০ টাকায় পাইকারিতে বিক্রি হলেও খুচরায় দাম অনেক বেশি।
ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৬,১০০–৬,১২০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতাদের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ১৬৮ টাকা হলেও তারা বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়—অর্থাৎ লিটারপ্রতি ১২ টাকার বেশি লাভ।
অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে দাম কমার পাশাপাশি দেশের ভোগও কিছুটা কমে গেছে। তবুও খুচরা বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। গত রমজান ও কোরবানির ঈদের আগে সরকার বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করেছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আর সক্রিয় রাখা হয়নি।
ভোক্তা স্বার্থ সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন, “সরকার উৎসবের সময়ে দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়, কিন্তু সারা বছর কোনো কার্যকর তদারকি থাকে না। ফলে ভোক্তারা পাইকারি দরের সুবিধা পান না এবং বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হন।”
তিনি আরও বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার সারা বছর স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং জরুরি। তবেই খুচরা পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে এবং সাধারণ ভোক্তারা প্রকৃত সুফল পাবেন।