
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়েছেন।
নিহতদের একজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রতন ঢালী (২৯) এবং অন্যজন ফয়সাল হোসেন (২২) নামে এক তরুণ, যার বিস্তারিত পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর)।
বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (সিটিটিসি) ইউনিট বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার রওশন সাদিয়া আফরোজ বলেন,
> “আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি, রতন ঢালী টিটিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।”
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রতন ও ফয়সাল ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে পৌঁছে তারা টিটিপিতে যোগ দেন।
দুজনই এর আগে ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত ছিলেন।
পরিবারের বর্ণনায় রতনের শেষ দিনগুলো
রতন ঢালীর পরিবারের বরাতে জানা গেছে, তিনি সর্বশেষ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ২০২৪ সালের রোজার ঈদে (১০ এপ্রিল)।
সেসময় তিনি মাকে জানান, ভারতে আছেন এবং শিগগিরই দুবাই যাবেন। মায়ের প্রশ্নে বলেন, তাঁর কর্মস্থল থেকেই টাকার ব্যবস্থা হয়েছে। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ করেননি।
রতনের বাবা আনোয়ার ঢালী, যিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক, জানান,
> “ছেলে গ্রামের বাড়ি থেকে সব কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, দুবাই যাওয়ার জন্য লাগবে। আমি দেখতে চেয়েছিলাম কে পাঠাচ্ছে, কিন্তু সে বলেছিল এতে সমস্যা হবে।”
স্থানীয়রা জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে রতন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করেন।
তাকে শান্ত স্বভাবের ছেলে হিসেবেই সবাই চিনতেন। তবে বিদেশ যাওয়ার আগ্রহে হঠাৎ সে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
গোয়েন্দা সূত্রে নতুন তথ্য
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে টিটিপির ৫৪ যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পাওয়া তথ্য থেকেই রতন ও ফয়সালের নাম উঠে আসে।
এর আগেও নিহতদের তালিকায় বাংলাদেশের সাভারের আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজ-এর নাম পাওয়া গিয়েছিল।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, টিটিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রতন ও ফয়সাল শুধু যুদ্ধেই অংশ নেননি, বরং বাংলাদেশি তরুণদের অনলাইনে প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে সতর্কতা জারি করেছে।
উদ্বেগ বাড়ছে চরমপন্থার নতুন ধারা নিয়ে
চরমপন্থা বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতে, অনলাইন প্ররোচনা ও বিদেশে চাকরির প্রলোভন এখন তরুণদের জঙ্গি সংগঠনের দিকে টেনে নেওয়ার বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে।
তারা বলছেন, সময় থাকতেই এই প্রবণতা রোধে ডিজিটাল মনিটরিং ও সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা জরুরি।