
জাতীয় নির্বাচনের দিনই হবে গণভোট: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে সময় ও ব্যয় উভয়ই সাশ্রয় হবে, পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও আরও সুদৃঢ় হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, “গত ৯ মাস ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংবিধান সংস্কারের ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছে এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। যদিও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তবু সার্বিকভাবে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠেছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক।”
তিনি জানান, জুলাই জাতীয় সনদ বা সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া অনুযায়ী চারটি মূল বিষয় গণভোটে জনগণের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের গঠন,
দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা,
সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি,
বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও কমিটির সভাপতির নির্বাচন,
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ,
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি,
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার সংস্কারসহ মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ।
তিনি আরও বলেন, “গণভোটের দিন জনগণ এক প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত প্রকাশ করবেন। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে, যার মেয়াদ নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত বহাল থাকবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে বিচার, সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সাধারণ আদালতে চলছে। পাশাপাশি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আর্থিক স্বচ্ছতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, ডিজিটালাইজেশন সম্প্রসারণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে।
প্রফেসর ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, “আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারে, সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন দেশের সুশাসন ও সংবিধান সংস্কারের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হয়ে থাকবে।”