মোঃ নজরুল ইসলাম।। রবিবার (১৬ জানুয়ারী) ভোলার লালমোহন ৭নং ওয়ার্ড মুন্সী ভবন, উত্তর বাজার, উম্মুল মু’মিনীন মহিলা ক্বওমী মাদ্রাসার শুভ উদ্বোধন ও ছবক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নসিহত পেশ করেন মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম, পীর সাহেব, চরমোনাই।
এই সময় তিনি বলেন আদর্শ মান নারীই পারে আদর্শ মান সন্তান প্রতিপালিত করতে। মনে রাখতে হবে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া আদর্শ মানুষ গঠন করা সম্ভব নয়। এক সময় মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য স্বীকৃত তেমন কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। নিজের ঘর কিংবা এলাকার মক্তবই ছিল তাদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার উপযুক্ত স্থান। সেই সময়কার মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষায় যতটা না অগ্রগামী ছিল, তারচেয়ে বেশি পিছিয়ে ছিল জাগতিক শিক্ষার্জন থেকে। জাগতিক শিক্ষার্জন অনেকে ঘৃণার চোখে দেখতো।
কারণ, তখনকার মুসলিম মেয়েরা অতবেশি শিক্ষিত না হলেও ধর্মভিরু ছিলো। ধর্ম সম্পর্কে মা-দাদি থেকে যতটুকু জেনেছে তা পরিপূর্ণভাবে আমল করেছে। তারা শিক্ষার্জনে স্কুল-কলেজে যাওয়াকে ভিন্নচোখে দেখতো। নিজের ঘরই ছিল তাদের জন্য নিরাপদ এবং উপযুক্ত স্থান। তাই তখন প্রয়োজন পড়েনি তাদের জন্য আলাদা শিক্ষাঙ্গনের। জাগতিক শিক্ষাকে তারা গুরুত্বই দিতো না। তবে সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে দৃশ্যপট। এখন আধুনিক যুগ। শিক্ষার বিকল্প নেই। স্লোগান উঠেছে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সকলের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এখন মানুষ নানামুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। বসে নেই মেয়েরাও। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে তারাও এগিয়ে যাচ্ছে জ্ঞান অন্বেষণের অনন্য এক উচ্চতায়।
তবে সমস্যাটা হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে। জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে এখন গ্রাম পাড়ি দিয়ে শহরে যেতে হয় না। প্রায় প্রতিটি এলাকা, গ্রাম, মহল্লায় গড়ে উঠেছে জাগতিক শিক্ষার নানামুখী প্রতিষ্ঠান। তবে মুসলিম দেশ হিসেবে সেই অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না ধর্মীয় মহিলা শিক্ষালয়।
ফলে মুসলিম পরিবারের মেয়েদেরও বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে জাগতিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে। যেখানে নেই প্রকৃত ধর্মীয় নৈতিক (দ্বীনি শিক্ষা। আছে সর্বদা বিপদের আশঙ্কা। সবকিছু বিবেচনা করে যুগের চাহিদা মিটাতে আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর পূর্বে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় মহিলা মাদ্রাসা।
ফলে মহিলা মাদ্রাসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। মেয়েদের দ্বীন শেখাতে মহিলা মাদ্রাসার অবদান আজ অনস্বীকার্য। প্রকৃত দ্বীন মুসলিম ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিতে মহিলা মাদ্রাসা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষী অপশক্তি ইসলামকে চিরতরে মুছে দিতে জাগতিক শিক্ষার মাধ্যমে যে পায়তারা চালাচ্ছে তা আজ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে মহিলা মাদ্রাসা সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার কারণে।
মহিলা মাদ্রাসায় যেমন সঠিক দ্বীন শিক্ষা দেওয়া হয়, তেমন যুগের চাহিদা মিটাতে বাংলা, অংক, ইংরেজি, সমাজ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয়েও গুরুত্ব সহকারে পাঠদান করা হয়। ক্বওমী মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রীদের লেখাপড়ার মানও মাশা-আল্লাহ অনেকটা এগিয়ে। এই মহিলা মাদ্রাসা জাতিকে দক্ষ, শিক্ষিতা, নীতিবান, আদর্শ মা উপহার দিচ্ছে। যা ইসলামের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বড্ড প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে উক্ত মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওঃ মোঃ মুছাকালিমুল্লার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালমোহন পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম নবিন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও ইসলামী আন্দোলন এর লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।