• শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
জেনে নিন হোয়াটসঅ্যাপে এআই ছবি বানানোর নিয়ম,,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা এক নজরে দেখে নিন কে কার মুখোমুখি হচ্ছে শেষ ষোলোয়,,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা ডুন’ পরিচালকের হাত ধরে ফিরছেন জেমস বন্ড,,,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা ইন্দুরকানীতে ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন,,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা মসজিদে নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে শহীদ হন মনির হোসেন,,,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা বিতর্কিত তিন নির্বাচনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা আইন মন্ত্রণালয় আগামী ৬ মাসে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে,,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা আগে স্থানীয় নির্বাচন দরকার, বললেন নুর,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা বহুতল ভবন নয়, দীর্ঘশ্বাসের স্তূপ,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা এবার দক্ষিণ লেবানলে বিমান হামলা চালাল ইসরায়েল,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা


আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, আমি কার মুখ দেখে বেঁচে থাকবো?’ শহিদ শাহিনুরের মায়ের আকুতি,,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা

রিপোর্টার: / ৯৭ পঠিত
আপডেট: সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪


 

লালমনিরহাট, ১১ নভেম্বর , ২০২৪: স্বপ্ন ছিল নিজের উপার্জন দিয়ে বসত ভিটা কিনে বাবা-মাকে একটা বাড়ি করে দেওয়ার। আর এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট থেকে দেশের রাজধানী ঢাকায় ছুটে যাওয়া। কিন্তু সেই ইচ্ছে মাটিতে বিলীন হয়ে গেছে শাহিনুরের।

বলছি লালমনিরহাট জেলা সদরের বড়বাড়ি ইউনিয়নের বড় বাসুরিয়া গ্রামের মোঃ শাহিনুর আলমের কথা।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ ই আগস্ট সরকার পতনের পরদিন ৬ ই আগস্ট মঙ্গলবার সকালে ৮.৩০ মিনিটে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার লালবাগ থানার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন শাহিনুর আলম(১৯)। এ সময়ে থানার সামনে চলছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিল। শাহিনুর মিছিলে যোগ দেন। ঠিক সেই সময় থানার ভেতর থেকে পুলিশ অতর্কিত গুলি চালাতে শুরু করে। শাহিনুরের গায়ে গুলি লাগে। তিনি রাস্তায় পড়ে যান।

পরে তাকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন স্বপ্নবাজ এই ছেলেটি। পরে ৬ ই আগস্ট রাতে তার লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে বড়বাড়ি ইউনিয়নের খেদাবাগের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ি ইউনিয়নের বড় বাসুরিয়া গ্রামের মোঃ আব্দুল জব্বার (৫৭) ও মোছাঃ মাছিরন বেগমের (৫৩) তৃতীয় ছেলে ছিলেন মোঃ শাহিনুর আলম।

মোঃ মাজেদুল ইসলাম (২৪) ও মোঃ সাইদুল ইসলাম (২১) নামে দুজন বড় ভাই এবং মোছাঃ মাজেদা বেগম (২৩) ও মোছাঃ মারুফা খাতুন (১২) নামে তার আরো দুজন বোন রয়েছে।

শাহিনুর আলম ভাইবোনদের মধ্যে তৃতীয় । ভাই মাজেদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম দুজনেই অটো রিকশা চালক। বোন মাজেদা বেগমের বিয়ে হয়েছে । তিনি একজন গৃহিণী । ছোট বোন মারুফা খাতুন মোহাম্মদবাগ আদর্শ নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। শাহিনুর আলম দারূস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন।

পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় একটি ছাত্রাবাসে থেকে অটো রিকশা চালাতেন তিনি। অটো রিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করতেন তার বড় একটি অংশ বাবার হাতে তুলে দিতেন। মূলত তার টাকায় ছোট বোন মারুফা খাতুনের পড়াশুনাসহ তার বাবার সংসার চলতো।

গ্রামবাসী জানায়,শাহিনুর আলম একজন নম্র, ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। তাই একটি সড়কের নাম তার নামে ‘শাহিনুর আলম সড়ক’ করা হয়েছে।

বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে। এখন তেমন কাজকর্ম করতে পারি না। আগে মানুষের জমিতে কাজ করে টাকা উপার্জন করতাম। আমার নিজের বলতে কিছুই নেই। সরকারি খাস জমিতে বাড়ি করে থাকি আমরা। নিজের কোন জায়গা-জমি নেই। আমার যেই ছেলে টাকা পয়সা দিয়ে আমাদের সাহায্য করত তাকেই তারা গুলি করে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিলো। তার মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে গেছে আমার পুরো পরিবারের উপার্জনের চাকা। অন্যদিকে আমার স্ত্রী ছেলে হারানোর শোকে পাগল হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত এখন তার চিকিৎসা করতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার যদি আমাদের সংসারের খোঁজ খবর রাখে এবং সাহায্য করে তাহলে আমাদের অসচ্ছল পরিবারটি হয়তো আবারো আগের মতো করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

আর্থিকভাবে সাহায্য পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহিনুর আলমের বাবা জানান, তারা এখনও তেমন কোন আর্থিক সাহায্য পাননি। তবে বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু ৭০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত অনেকেই বাড়িতে আসলেও কেউ কোন টাকা পয়সা দেয়নি।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে সহ দেশের এই আন্দোলনে যারা মায়েদের বুক খালি করেছে, যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত আমি তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় দেখতে চাই। বর্তমান সরকারের প্রতি আমার এটা দাবি।

শাহিনুর আলমের মা মাছিরন বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমার ছেলেকে ওরা হত্যা করেছে। আমি এখন কার মুখ দেখে বেঁচে থাকব! কে আমারে ওষুধের টাকা দেবে? কে আমার জামাকাপড়ের টাকা দিবে ? কে আমার ছোট মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাবে ? আর কেই বা আমারে  মা বলে ডাকবে?

লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নাজমুল হুদা লিমন জানান, আমি নিজেই শাহিনুর আলমের পরিবার সম্পর্কে অবগত রয়েছি। তার মৃত্যুতে আমি নিজেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। ওই পরিবারটি অনেক অভাবী। মূলত শাহিনুরের টাকায় তার বাবা মা খেয়ে পরে চলতো। এখন তো শাহিনুর নেই। এখন তাদের খুব অর্থ সংকট।

তিনি আরো বলেন, আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব আর্থিক সাহায্য করার।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতার সব রকম ব্যবস্থা করব ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ