সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত আরাফাত জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় কুলসুম বেগম (৩৭) নামে এক নারীর মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। অতি সম্প্রতি আরাফাত জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টারে থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই নারীর মৃত্যু হলে গোপনে দুই লাখ টাকায় মিমাংসার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে মর্মে অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসি। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি আরাফাত জেনারেল হাসপাতালে কুলসুম বেগম নামের ওই নারীর জরায়ুর অপসারণ করেন হাসপাতালটির নারী ডাঃ সায়েদা আক্তার (নিপা)। অপরাশেনের পরে রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, জরায়ুর অপারেশন করতে গিয়ে ভুলক্রমে নাড় কেটে ফেলায় রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। তাই ওই রোগীকে তড়িঘরি করে ঢাকায় রেফার্ড করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
এর আগে আরাফাত জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের ইসলামবাগ গ্রামের ইকবাল খানের স্ত্রী কাজল আক্তার নামে আরো এক প্রসূতি নারীর মৃত্যু হয়। এছাড়া প্রায় ৬ মাস আগে হাসপাতালটির নারী ডাক্তার মনির ভূল চিকিৎসার কারণে জমজ দুটি বাচ্চা মারা যায়। সে সময় জমজ বাচ্চা মারা যাওয়ার ঘটনাটি ৫ লাখ টাকায় মিমাংসা করেন ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়রাম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদার। এছাড়া হাসপাতালটিতে আগত একাধিক রোগীর ভূল চিকিৎসার অভিযোগ থাকলেও সেসকল ঘটনা অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে জানা যায়, আরাফাত জেনারেল হাসপাতালে প্রতিনিয়ত প্রসূতি নারীদের সিজারিয়েন করা হয়। হাসপাতালের আসা প্রতিটি প্রসূতির সিজারিয়েনের পূর্বে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাবান কেনার জন্য ১ শত টাকা থেকে দেড় শত টাকা নেন হাসপাতালের নারী কর্মচারী ও আয়ারা। অথচ একটি সাবান দিয়ে কমপক্ষে ৫০ টি নবজাতকের গোসল করানো গেলেও প্রত্যেক প্রসূতির পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া সাবান কেনার টাকা তারা নিজেরা পকেটে ভরেন।
নিহত কাজল আক্তারের ভাই আশরাফুল অভিযোগ করে বলেন, আমার বোনের সিজার করি আরাফাত হাসপাতালে। সিজারের সময় ডাক্তার ঠিক মত রক্ত পরিস্কার করে নাই। ভিতরে বদ রক্ত জমে থাকার কারণে ইনফেকশন হয়ে যায়। পরে এখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর সেখান থেকে আমার বোনকে আদদিন হাসপাতালে নিয়েছিলাম। সেখানে লাইফ সাপোর্টে দুই মাস থাকার পর আমার বোন মারা যায়। পরবর্তীর্তে আমরা মামলা মোকদ্দমায় যেতে চেয়েছিলাম। আমার বোন জীবিত থাকতে বলেছিলো তাকে যেন পর্দার সহিত মাদ্রাসার কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়। মামলা করলে লাশ উঠাতে হবে। এদিকে আবার বোন জামাই মাললার ঝামেলায় যেতে বারণ করায় আমরা আর মামলা মোকদ্দমায় যায় নি। আমার বোনের মৃত্যুর পিছরে হাসপাতালে গাফলতি ছিলো। আপনি নিউজ করেন। যত ধরনের সাপোর্ট লাগে আমরা দিবো।
এবিষয়ে মঙ্গলবার সরজমিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য জানতে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে হাসপাতালে মালিক ও এমডি আব্দুর রউফ গোপনে সটকে পরে। হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্বে কে রয়েছে এ বিষয়ে রিসিপশনে জানতে চাইলে বলেন, জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বলেন। দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম প্রতিবেদকের সামনে উপস্থিত হয়ে কুলসুম বেগবের মৃত্যুর সত্যতা স্বীকার করলেও পূর্বের ঘটনাক অস্বীকার করেন। অভিযুক্ত ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ/কথা বলতে চাইলে তিনি বধা দেন এবং ডাঃ সায়েদা আক্তার (নিপা) এবং মালিকের নিষেধ আছে মর্মে জানান। মুঠোফোনে যোগাযোগের জন্য ডাক্তারের মোবাইল নাম্বার চাইলে ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম রাগান্বিত হয়ে প্রতিবেদক কে বলেন, আপনারা যেভাবে পারেন জোগাড় করে নেন আমরা দিব না। অভিযুক্ত ডাক্তারের সরকারি রেজিস্ট্রেশন আছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিবেদকের সাথে ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম ধাম্ভিক আচরণ করেন।
সরজমিনে অনুসন্ধানে ম্যানেজার জানান, হাসপাতালটিতে ১০ বেডের অনুমোদন থাকলেও ভবনের ২য় তলায় ১২টি বেড এবং ৩য় তলায় ১২টি মোট ২৪টি বেড রয়েছে। সার্বক্ষণিক রোগীদের তদারকি করার জন্য এমবিবিএস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে একজন ছাত্র সাইদুর সালেহিন শুভ। যাহার এখন এমবিবিএস পার্ট-১ই সম্পূর্ণ হয়নি। ২জন ডিপ্লোমা নার্স থাকার কথা, সেখানে সন্ধিয়ান একজন রহিয়াছে। সর্বশেষ ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, এটা হাসপাতাল এখানে মানুষের জন্ম হবে, মানুষের মৃত্যু হবে এটাই স্বাভাবিক। যদি আপনাদের কাছে এমন কোন তথ্য থাকে তাহলে আপনারা রিপোর্ট করেন। যদি আপনাদের রিপোর্টে কোন ত্রুটি থাকে তাহলে প্রয়োজনে আমরা আপনাদের অফিসে প্রতিবাদ জানাবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জামশেদ ফরিদী বলেন,আমাদের কাছে যদি ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ অভিযোগ করে তাহলে জেলা সিভিল সার্জনের সাথে পরামর্শ করে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।