হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। বর্তমানে রাজধানীর হাসপাতালে ৪৮ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনা ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে শঙ্কার বার্তা দিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সে হিসাবে ডেঙ্গু আতঙ্কের মৌসুম শেষ হয়ে যায়নি। উপরন্তু উদ্বেগ বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৩৯২ জন, মৃতুবরণ করেছিলেন ৩ জন। গত বছর থেকে করোনার প্রকোপে বিপন্ন হয়েছে জনজীবন। সংক্রমণ ও মৃত্যু আগের চেয়ে দ্বিগুণ। এমন অবস্থায় যদি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে, তা হলে এর চেয়ে উদ্বেগের ঘটনা আর কী আছে। উল্লেখ্য, মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি মাঝে মাঝে চলাচ্ছে বিশেষ চিরুনি অভিযান। গত ১২ জুন এডিস মশার লার্ভা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাও করেছে। এ সময় ২১টি মামলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলছে। বৃষ্টিতে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে মশা বংশবিস্তারের সুযোগ পায় এবং লার্ভার ঘনত্ব বেড়ে যায়। লার্ভার ঘনত্বের কারণে কিছুকিছু এলাকা ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যেই নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নির্মাণাধীন ভবন, খালি কনটেইনারে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। এসব থেকে নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। বালতি, বোতলে কিংবা কোনো পাত্রে পানি যেন জমতে না পারে এজন্য কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকদের খেয়াল রাখতে হবে। এটা সত্য, ৫০ বছর আগেও ডেঙ্গুর বিষয়ে মানুষ তেমন জানতেন না। কিন্তু পরবর্তীকালে এটি ধীর গতিতে এগিয়ে মহামারিতে রূপ নেয়। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মাত্র ৯টি দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছিল। কিন্তু এখন বছরে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। যা সারা বিশ্বের জন্য অশনিসংকেত। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর আগ্রাসন বাড়ার কারণে জনমনে ব্যাপকভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০২০ সালে এর মাত্রা কম ছিল। এবার দেশ করোনা সামাল দিতেই হিমসিম খাচ্ছে। ফলে সঠিকভাবে মশক নিধনের বিষয়টি চাপা পড়ে যাচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশনের উচিত আগে থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ওষুধ ছিটানোর কাজটি ব্যাপকভাবে শুরু করা। পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই।
You cannot copy content of this page