রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘুরছেন এক পাগলী মা। সকালে নগরীর জাহাজ কোম্পানীর মোড়, পায়রা চত্বর ও বিকেলে রাজা রামমোহন মার্কেটের সামনে পাতলা কম্বল গায়ে জড়ানো এ নারীকে দেখে অনেকেই জানতে চায় কোলের সন্তান সম্পর্কে। আশেপাশে কিছু মানুষের ভিড়।
রংপুর নগরীতে একজন পাগল মহিলা প্রায় ৫ দিন থেকে মৃত বাচ্ছা নিয়ে ঘুরছে এই সংবাদ পায়, আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংস্থা, আসক ফাউন্ডেশন, সংবাদ পেয়ে সোমবার রাতে আসক ফাউন্ডেশনের রংপুর বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বাবুর নেতৃত্বে মানবাধিকার টিমসহ সরেজমিন রাজা রাম মোহন মার্কেট কৈলাশ রঞ্জন স্কুল এর পিছনে যাওয়ার পর পাগল মহিলাকে দেখতে পায় মৃত বাচ্চাসহ।
সংবাদের সত্যতা পেয়ে পাগলী মহিলার কাছ থেকে মৃত বাচ্চাটি উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই মহিলা কোন মতেই তার মৃত সন্তানকে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। উপায় না পেয়ে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় মানবাধিকার টিম ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশের সহযোগিতা নেন। অবশেষে মানবাধিকার টিম ও পুলিশের সহযোগিতায় পাগলীর কাছ থেকে মৃত বাচ্চাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বাচ্চাটি উদ্ধার শেষে নব নির্বাচিত ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম পারভেজ এর ব্যবস্থাপনায় বাচ্চাটির দাফন-কাপনের ব্যবস্থা করা হয়।
এ ব্যাপারে আসক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবু বলেন, আমরা সংবাদ পেয়ে আমাদের টিম নিয়ে খুজতে-খুজতে রামমোহ মার্কেটের পাশে পেয়ে পুলিশ ও নব্য কাউন্সিলরের সহযোগীতায় বাচ্চাটির দাফন কার্য সম্পুর্ণ করি এবং মহিলাটিকে বিশেষ ব্যবস্থার জন্য পুলিশের হাতে তুলে দেই।
জানা যায়, ওই নারী কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর এলাকার বাসিন্দা। বিয়ে না হলেও এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। গত ১৭ দিন আগে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম দেন তিনি। এরপর সন্তানকে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে গেলে সৎ বাবা তাকে মারধর করে শিশুটিকে বিক্রি করে দিতে বলেন। নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি রংপুর শহরে চলে আসেন।
সন্তান নিয়ে ঘুরে ঘুরে যেখানে রাত হয় সেখানেই খোলা জায়গায় কোনোরকমে রাত যাপন করেন। এতে একপর্যায়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে শুক্রবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসক জানান, শিশুটি মারা গেছে।
সন্তান মারা গেছে মানতে নারাজ মা তিনি হাল ছাড়েননি। মৃত সন্তানকে বাঁচিয়ে তোলার আশায় নগরীর মাহিগঞ্জে এক কবিরাজের কাছে ছুটে আসেন। কিন্তু সেই কবিরাজ শয্যাশায়ী হওয়ায় শিশুটিকে চিকিৎসা দিতে পারেনি। পরে মাহিগঞ্জ বাজার এলাকায় দিনভর মৃত সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন। রাতে তাকে দেখা যায় রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ ভিসা অফিসের সামনে।
ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, ওই নারী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। শীতে খোলা জায়গায় রাত কাটানোর জন্য শিশুটি মারা গিয়েছিল। অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ওই নারী কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গেছে আমরা বলতে পারছি না।
You cannot copy content of this page