বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চায় না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তারা চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির অন্য কেউ নেতা হোক। আর অন্য কাউকে নেতা বানানোর জন্য খালেদা জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে দেয় না। মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে সরকার এ ধরনের কোনো শর্ত কী রেখেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব আজগুবি কথা কোথা থেকে বলে আমি জানি না। কারণ খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আসলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না কেন জানেন? প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সুতরাং তারা চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির অন্য কেউ নেতা হোক। তাদের কথা যদি ধরেই নিই তারা খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছেন আর আমাদের জনপ্রিয়তা কমে গেছে। তাহলে তাদেরতো ক্ষমতায় যাওয়ার কথা যেভাবেই নির্বাচন হোক না কেন? এরপরও কেন নির্বাচনে যেতে চায় না। তারা যদি জিতেও তাহলে তো নেতা তারেক বা খালেদা জিয়া হতে পারবেন না। আর কাউকে নেতা বানানোর জন্য খালেদা জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে দেয় না। সরকার পতনের আন্দোলনে আছে বিএনপি এবং ঢাকা ঘেরাও করবে এ বিষয়টি সরকার কীভাবে দেখছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবো না। দেশে আবার ২০১৩, ১৪, ১৫ সাল তৈরি করবে। ঢাকা শহর দুই কোটি মানুষের শহর, ফলে ঢাকা ঘেরাও করতে কোটি মানুষ প্রয়োজন হবে। আর ঢাকা শহরে আমরাও থাকি। যারা তাদের পার্টি অফিসের সামনে থেকে পালিয়ে গরুর বাজারে আশ্রয় নেয়। যারা বোরকা পরে হাইকোর্টে হাজির হয়। তারা কী করতে পারবেন কতটুকু করতে পারবেন সেটা আমাদের জানা আছে। তবে কাউকে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা চালাতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল রাজপথে আছি, থাকবো এবং কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করার অপচেষ্টা চালায় তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করবো। বিএনপি বলছে সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাচ্ছে না এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার আইনের কোনো ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। যদি তারা মনে করে সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে তাহলে তারাতো আদালতে যেতে পারেন। আদালতের কাছে প্রশ্ন করতে পারেন। আর আদালত সেটি পরিষ্কার করবেন। আমি মনে করি, সরকার যদি ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে সেটা মনে করে তাহলে আদালতে যেতে পারেন। খালেদা একজন শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি। মামলাগুলো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। সেক্ষেত্রে তারাতো আদালতে গিয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতি যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন। বেগম জিয়া কী সে মহানুভবতা দেখিয়েছিলেন যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন সিএমএইচ হাসপাতালে রোগী দেখতে সেনানিবাসে ঢুকতে দেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেঁটে যেতে হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া সেই মানুষ যে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১৫ আগস্ট করেছে। তার জন্মদিন ৪/৫টি কোনোটায় ১৫ আগস্ট ছিল না। তার বিয়ের রেজিস্ট্রারে একটি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটি, পাসপোর্টে একটি, পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপে একটি এবং সর্বশেষ করোনা হওয়ার পর আরেকটি জন্ম তারিখ দেখা গেছে। কোনোটাতেই ১৫ আগস্ট ছিল না। তিনি তারিখটা বদলে যেদিন মানুষ শোকদিবস পালন করে সেদিন তিনি কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সেই মানুষ যার দুয়ারে দেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়ে ২০ মিনিটের বেশি সময় দাঁড়িয়ে ছিল দরজা খোলা হয়নি। কী পরিমাণ দম্ভ, অহমিকা দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য দরজা খোলেনি। খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ১২টি মামলা করেছিলেন। আমাদের সরকার তার বিরুদ্ধেতো একটি মামলাও করেননি। যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সেই মামলায় তিনি সাজা খাটছেন এবং সেই মামলার বিচার হচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছে। তাদের প্রমোশন দিয়েছে। এত কাজ খালেদা জিয়া করেছেন, এত প্রতিহিংসা দেখিয়েছেন। কিন্তু তার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভবতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। সেটি কী তারা কখনও করতেন? শুধু তাই নয়, তারা (বিএনপি) এফবিআইর এজেন্ট লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদকে আমেরিকায় অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছেন। সেই চক্রান্ত ফাঁস হয়েছে এফবিআইর বিচার হচ্ছে। বেগম জিয়া টিউলিপের নাম দেখে চুক্তি পর্যন্ত বাতিল করেছে। কী প্রতিহিংসা তার। সেই মানুষটির প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখাচ্ছেন সেটি অনেক বেশি বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করেছিল। গত ১৫ বছরে তাদের কোনো মিটিংয়ে একটি পটকা ফুটেছে? তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেছেন। তারপরও তার প্রতি জননেত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন সেটি অন্য কেউ হলে পারতো না। অথচ বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন যে প্রতিহিংসা দেখিয়েছেন সেটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। আজকে তারা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, কথা বলছেন। অবশ্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে মহাসচিবের পদ রক্ষা করার জন্য কথা বলতে হয়। তাদের চাকরি রক্ষা করার জন্য এগুলো বলতে হয়। এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সমীচীন নয়। দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিনফিড) সম্প্রচার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। কিছু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন এখনও প্রচার করছে, সেটা বন্ধ করতে হবে বলে জানান তিনি। ক্লিনফিড চালুর পরে কতটুকু উন্নতি হয়েছে, আগামীতে নতুন কী করা হবে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ক্লিনফিড না থাকার কারণে কমপক্ষে প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকা বিদেশে চলে যেত। এখন ক্লিনফিড চালু হওয়াতে কী লাভ হয়েছে, সেটা টেলিভিশনের মালিক যারা আছেন তারা বলতে পারবেন। তবে কিছুকিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনও আছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশি টিভির মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্যের প্রদর্শন বা বিজ্ঞাপন বন্ধ হওয়াতে আমাদের টেলিভিশন শিল্প উপকৃত হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের দেশ থেকে যে ৫০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন চলে যেত, সেটা বন্ধ হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতি ও মিডিয়া শিল্পের জন্য ভালো হয়েছে। ক্লিনফিডের উপকার শুধু টেলিভিশন শিল্প পাঁচ্ছে তা নয়, পুরো মিডিয়া শিল্প এটা পাঁচ্ছে। হাছান মাহমুদ বলেন, কিছু আইএসপি প্রতিষ্ঠান যারা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার তারা কিন্তু ক্লিনফিড চালাচ্ছে না। তারা তাদের মতো ইনারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। আজকে এটিও একটি আলোচনার বিষয় এবং এটি বন্ধ করতে হবে। সম্প্রতি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিয়েছে কোনো বিবাহিত ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেলে থাকতে পারবে না এবং বিআরটি বাসের নিচ তলাতে মেয়েরা উপরে ছেলেরা বসবে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি কাগজে নিউজটা দেখেছি। আমি আশ্চর্য হয়েছি এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নিতে পারে। বিয়ে করলে ছাত্রীরা হলে থাকতে পারবে না, এরকম সিদ্ধান্ত আমার দৃষ্টিতে একেবারেই অযৌক্তিক। এরকম সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়? এটা হতেই পারে না। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আজকের এ যুগে ছাত্রীরা এক তলায় বসবে আর ছাত্ররা দোতলায় বসবে, বিষয়টি জানা ছিল না। এটিও অবাস্তব, এটা সৌদি আরব নয়, বাংলাদেশ।