মুহাম্মদ কবির হুসাইন (রামগঞ্জ)।।
(১) সন্তানের সামনে নিজেরা কাপড় পরা / বদলানো থেকে বিরত থাকুন।
জাগ্রত শিশু সন্তানের সামনে যৌন মিলন থেকেও বিরত থাকুন এবং যত্রতত্র উলঙ্গ অবস্থায় যেতে নিষেধ করুন।
ইসলাম নির্দেশিত সতর ঢেকে রাখুন এবং শিশুদের সতর সম্পর্কে জ্ঞান দান করুন। (ইসলামের দৃষ্টিতে শিশু প্রতিপালন-নীতিমালা).
(২) আপনার মেয়ে শিশুকে অন্য কারো (অপরিচিত লোক) কোলে বসতে দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এমনটি নিজস্ব আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন।
ছোটবেলা থেকে পর্দার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করুন। (আদাবুল মুশাআরাত).
(৩) বিশেষভাবে মেয়ে সন্তানকে খেলাধুলায় সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। খেয়াল রাখুন আপনার সন্তান যখন বন্ধুদের সাথে খেলতে যায় তখন তারা কি ধরনের খেলা খেলছে ? নিছক বিনোদন বা সময় কাটানো জাতীয় খেলাধুলা ছাড়া অন্য সব ধরনের খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন।
লক্ষ্য রাখুন, শিশুদের খেলাধুলার বিষয় যেন বিয়ে-শাদি বা সংসার না হয়। (আদাবুল মুশাআরাত).
(৪) খেয়াল রাখবেন কেউ যেন দুষ্টামি করেও আপনার মেয়ে সন্তানকে কখনো আমার বউ বা আমার ছেলের বউ ইত্যাদি কথা না বলে। কারণ এতে করে সন্তানের মাঝে অপরিণত বয়সেই বিয়ের মানসিকতা সৃষ্টি হতে পারে। ইসলাম বৈধ উপায়ে যথার্থ সময়ে বিয়ের আদেশ দিয়েছে, আগেও নয় এবং খুব পরেও নয়। (আদাবুল মুশাআরাত).
(৫) অন্য প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কিংবা মহিলার কাছে আপনার মেয়ে সন্তানকে পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন এবং জোর করে এমন কোথাও তাকে পাঠানো থেকে বিরত থাকুন যেখানে সে যেতে চায় না।
এমনকি আপনি যদি কখনো খেয়াল করেন, কেউ আপনার মেয়ে সন্তানকে খুব বেশী আদর-সোহাগ করছে, তাতেও সতর্ক থাকুন। কারণ মানুষ মাত্রই ভুলকারী। শয়তান যে কোন সময় যে কোন মানুষকে ধোঁকায় ফেলতে পারে, তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত। (আদাবুল মুশাআরাত).
(৬) সাবধানতা ও সতর্কতার সাথে আপনার মেয়েকে বয়ঃসন্ধিকালীন সঠিক যৌন শিক্ষা প্রদান করুন এবং তাকে এই সময়কালীন বিভিন্ন অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করুন।
তাকে পিরিয়ডের সময় করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষাদান করুন। তাকে এটাও বুঝান, এটা প্রতিটা নারীর জীবনেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনার মেয়ে সন্তানকে জানতে সাহায্য করুন, ইসলাম কেন এই সময় ইবাদত-বন্দেগী করতে নিষেধ করেছে। (আদাবুল মুশাআরাত).
(৭) যদি কখনো দেখেন হঠাৎ করে আপনার মেয়েটি কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে, সতর্কতার সাথে কারণ আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন এবং কারণ দূর করুন। আপনার কাছে কারণ যদি যৌন হয়রানি আবিষ্কৃত হয় তাহলে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করুন এটা ভুল এবং এই ভুল থেকে দূরে থাকা উচিত। আর সাথে সাথে ইসলামী বিধিনিষেধগুলো তাকে জানান। ইসলাম নির্দেশিত যৌন হয়রানির শাস্তি ও পরিনামের কথা তাকে জানান। (আদাবুল মুশাআরাত).
(৮) অনেক মায়েদের দেখা যায় বাচ্চাদের ঠাণ্ডা রাখার জন্য বিভিন্ন কার্টুন ও মুভি দেখান – এটা কখনোই করবেন না। কারণ ছোটবেলাতেই এসব জিনিস বাচ্চাদের মানসিকতায় বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। আর ইসলাম তো এসব কার্টুন ও মুভি দেখানোকে কখনোই সমর্থন করে না। বরং এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভালো গল্প শোনানো যেতে পারে। (আদাবুল মুশাআরাত).
(৯) মেয়ে সন্তানদের বয়স ৩ বছর হলে সন্তানকে টয়লেট শেষে নিজে নিজে গোপনাঙ্গ পরিস্কার করতে শেখান এবং তাকে ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্বের কথা জানান। তাকে শিখতে সহযোগিতা করুন ইসলাম কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করার নিয়ম-পদ্ধতি বলেছে। (আদাবুল মুশাআরাত).
(১০) আরেকটা ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকুন – প্রয়োজন ছাড়া মেয়েকে গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরা বিরত থাকুন (তার গোপনাঙ্গ স্পর্শের ব্যাপারে)। এতে করে লজ্জাহীনতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (আদাবুল মুশাআরাত).
(১১) খারাপ কাজ, মন্দ ব্যক্তি, কুরুচিপূর্ণ বিষয় এবং নিন্দনীয় আচরণের তালিকা তৈরি করুন এবং মেয়েকে সেগুলো শিক্ষা দিন। এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে, তাকে যা কিছু জানাবেন বা বুঝাবেন সবগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। (আদাবুল মুশাআরাত).
(১২) আপনার সন্তান কখনো কারো বিরুদ্ধে নালিশ করলে তা হেলায় উড়িয়ে দিবেন না, সেই ব্যক্তিটি যেই হোক না কেন। মনোযোগ দিয়ে তার নালিশ শুনুন আর যৌক্তিকতা বিচার করুন এবং মেয়েকে জানান, নালিশ ও বিচারের ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলেছে। (আদাবুল মুশাআরাত).
(১৩) ছোটবেলা থেকেই আপনার সন্তানকে প্রতিকূল পরিবেশে প্রতিবাদ করার জন্য অনুপ্রেরণা দিন। কীভাবে বাজে পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষা করবে তার ধারণা ও শিক্ষা প্রদান করুন। (আদাবুল মুশাআরাত)