বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। অধিক বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ ও জীবনযাপনের আশায় মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমায়। এসব প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স একটা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করে। রেমিট্যান্স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপিও বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে সবচেয়ে বেশি অবদান প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকদের সঙ্গে সমাজের মর্যাদাবান ব্যক্তিদের প্রতারণার চিত্র। কীভাবে তাদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভদ্রবেশী প্রতারক চক্র। জানা যায়, অনিয়মের ঘটনায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে। তখন আবারও চক্র গড়ে ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যারা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাঁদের ৩১ মে’র মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে। তথ্যে সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জনকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। বিএমইটির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে। ৩১ মে পর্যন্ত যেতে পেরেছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন। সেই হিসাবে ১৬ হাজার ৯৭০ জন যেতে পারেননি। ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও মালয়েশিয়া যেতে না পারা প্রায় সতেরো হাজার কর্মীদের বেশির ভাগই কয়েক লাখ টাকা দিয়েছে দালাল ও বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে। এ টাকা ফেরত পেতে তারা দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুফল পাননি। জানা যায়, এক ভোক্তভোগী সাড়ে ৬ লাখ টাকা চুক্তিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যেতে না পারায় সেই ব্যক্তি টিকিট না পেয়ে ৩১ মে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেন থেকে পড়ে যান নদীতে। অবশেষে উদ্ধার হয়েছে লাশ হয়ে। প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান রহমান জানিয়েছেন, কর্মীদের না যেতে পারার পেছনে মন্ত্রণালয়ের কোনো গাফিলতি ছিল না। মালেশিয়া যেতে না পারাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও মালেশিয়া যেতে না পারাদের অভিযোগের মাধ্যমে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে বলেও তিনি যানান। যদিও প্রতিমন্ত্রী আশ^াস দিয়েছেন তবুও ভুক্তভোগীদের মনে অনাকাক্সিক্ষত চিন্তা থেকেই যায়। যারা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মাঝে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারেনি তাদের কী হবে?। দালাল চক্রকে আইনের আওতায় এনে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে দিতে হবে। যাতে ভুক্তভোগীরা দুশ্চিন্তা আর হতাশায় মৃত্যুর মুখে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে সরকারকেই। কেননা এরা হলো রেমিট্যান্স যোদ্ধা, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। এদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকাটা অনেক গুরত্বপূর্ণ