গত ১৫ বছরে এক শ্রেণির মানুষ অবৈধ আয়ের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন। বিশেষ করে যারা মন্ত্রী-এমপি ছিলেন, তাদের অনেকের সম্পদ বৃদ্ধির হার দেখে যারপরনাই বিস্মিত হতে হয়। তাদের কারও কারও যে পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে, তা অকল্পনীয়। যেমন, রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক সংসদসদস্য এনামুল হকের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ শতাংশ! বস্তুত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীর যেসব হলফনামা আমরা দেখেছি, সেখানেও প্রকাশ পেয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পদ বৃদ্ধির এমন চিত্র। সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের এই অচিন্তনীয় সম্পদ বৃদ্ধির উৎস কী, তা অনুমান করা কঠিন নয়। সাবেক মন্ত্রী-এমপির সম্পদ ও আয় বৃদ্ধির হার উল্লেখ করে একটি তালিকা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংবলিত একটি আবেদন রোববার দুদক চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন। সেখানে বলা হয়েছে, মন্ত্রী-এমপিদের সীমাহীন এই আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি দুর্নীতি ছাড়া সম্ভব হয়নি। অনেক মন্ত্রী-এমপির সম্পদ বাড়ার চিত্র রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এর মধ্যে অনেক মন্ত্রী-এমপির সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার-প্রকাশিত হলেও তা অনুসন্ধানে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণœ করে। জনমনে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তি। আমরা জানি, রাজনীতিতে যে শ্রেণি-পেশার মানুষই আসেন না কেন, তাদের উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব মূলত জনকল্যাণ। আর একজন নির্বাচিত সংসদসদস্য শুধু জনপ্রতিনিধিই নন, প্রধানত তিনি আইনপ্রণেতা। অথচ দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতার স্পর্শ পাওয়ামাত্রই তাদের কেউ কেউ অস্বাভাবিকভাবে ফুলেফেঁপে ওঠেন। এ ক্ষেত্রে জনকল্যাণের চেয়ে আত্মকল্যাণই তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়। মূলত দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা বা অবহেলাই এজন্য দায়ী। দেশে দুর্নীতি দমনে স্বাধীন ও কার্যকর সংস্থা হিসাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে সংস্থাটিকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে সংস্থাটি হয়ে পড়ে নখদন্তহীন। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের সামনে বড় ভূমিকা পালনের সুযোগ এসেছে বলে মনে করি আমরা। প্রয়োজনে সংস্কারের মাধ্যমে দুদককে ঢেলে সাজাতে হবে। সংস্থাটির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আনতে হবে স্বচ্ছতা। এ ছাড়া দুদকের বিধিমালার ৫৪(২) বিধি বাতিলসহ আইনের আরও বেশকিছু ধারায় সংশোধন আনা দরকার। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। জানা গেছে, গত ১৫ বছরে যেসব মন্ত্রী-এমপি নিজেদের বিত্তশালী করতেই ব্যস্ত ছিলেন, এমন ৪১ জনের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। পর্যায়ক্রমে তাদের সবার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করবে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই তিনজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি রোধে অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি অরাজনৈতিক ব্যক্তি, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও তদন্তপূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।