ভারত থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর, ফসলি ক্ষেত ইত্যাদি। এখন অবশ্য নদীগুলোর পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যার প্রকোপ শেষ হওয়া মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। পানি নেমে যাওয়া শুরু হতেই দুর্ভোগ বাড়ছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মানুষের। স্পষ্ট হচ্ছে বন্যাজনিত ক্ষতগুলো। স্বাভাবিকভাবেই এ পর্যায়ে এসে বন্যার ক্ষত সারানো এবং পুনর্বাসনের প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বন্যায় সরকারি সম্পত্তি ও অবকাঠামোর যে ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো মেরামতের দায়িত্ব সরকারেরই; কিন্তু সাধারণ মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো পূরণ হবে কীভাবে? এক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি বন্যার্তদের সহযোগিতায় বিশেষ কিছু সতর্কতা জরুরি। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত তো আছেই, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ত্রাণ সহায়তায় পূর্ণ মনোনিবেশ করতে হবে। দুর্গত এলাকায় কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যদিও দুর্গত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, স্কাউট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব বেসরকারি সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কাজটি সবাইকে বিচ্ছিন্নভাবে না করে একসঙ্গে করার নির্দেশ দিয়েছেন। বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। ফলে এনজিও সেক্টর, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথভাবে বন্যার্তদের পুনর্বাসন কার্যক্রমেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আন্তর্জাতিক নদনদীগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ও দাবি আরও জোরালো করার লক্ষ্যে শক্ত কূটনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগামী দিনে দেশে কিংবা উজানে অসময়ে ভারি বর্ষণ হতে পারে। তাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কাজেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিবছর সম্ভাব্য ছোট-বড় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে এর প্রকোপ কমিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। নদীর নাব্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে সর্বাগ্রে