এম জাফরান হারুন::
পটুয়াখালীর বাউফলে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পলাতক ডিলারের নামে চাল তুলে লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তদন্তেও সত্যতা পায় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে ওই ডিলারের অনুকূলে জমা চালের বিপরীতে টাকা জমা দেন (ডিও) একই ইউনিয়নের অপর ডিলার। এতে তাঁকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উপজেলার বগা ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দুজন ডিলার। তাদের মধ্যে সুলতান সিকদার আওয়ামী লীগ কর্মী। গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি এলাকাছাড়া। এই সুযোগে তাঁর অনুকূলে বরাদ্দ চাল তুলে ভোগ করছেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল মৃধা ও কৃষক দলের সভাপতি মো. মাসুদ সিকদার।
এসব বিষয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগী সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাউফলের ইউএনও আমিনুল ইসলামকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি কয়েকজনের মাধ্যমে তদন্ত করে এর প্রমাণ পান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও সুলতান সিকদারের নামে থাকা খাদ্যবান্ধব চালের অনুকূলে টাকা জমা দিয়ে চাল তুলে বিতরণে একই ইউনিয়নের অপর ডিলার ও চাঁদপাল গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল হাসান সাবুকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সরকারি একজন তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেন।
ডিলার জাহিদুল হাসান সাবু ১১ সেপ্টেম্বর সুলতান সিকদারের অনুকূলে থাকা ১৪ টন ৩০০ কেজি চালের ডিও বাবদ এক লাখ ৮৬ হাজার ৩০ টাকা জমা দেন। বিষয়টি জানতে পেরে বগা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল মৃধা সেদিন সন্ধ্যার পর জাহিদুল হাসান সাবুকে মোবাইল ফোনে গালাগাল ও ‘সাইজ’ করার হুমকি দেন। তিনি সেদিনই থানায় জিডি করেন বলে থানার ওসি আকতারুজ্জামান সরকার নিশ্চিত করেছেন।
জাহিদুল হাসান সাবুকে বাবুল মৃধা বলেন, ‘আমার ছেলেরা এটা দিয়ে দুই পয়সা রোজগার করে, তুই কেন ডিও ছাড়াইলি? কার নির্দেশে তুই ডিও দিছস? তুই আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মতলেবের দোসর, এলাকায় আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছো; তোকে দেখিয়ে দেবো।’ এসব বলে তাঁকে হুমকি দেন উল্লেখ করে জাহিদুল হাসান বলেন, ‘ইউএনও স্যার ডিও ছাড়িয়ে গরিব-অসহায়দের দিতে বলেছেন। এতে আমার কী দোষ?’
ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল মৃধা ও কৃষক দলের সভাপতি মো. মাসুদ সিকদারের ভাষ্য, ৫ই আগস্টের পরে তারা সুলতান সিকদারের নামে বরাদ্দ চাল তুলে সঠিকভাবে মানুষকে দিয়েছেন। কিন্তু জাহিদুল ইসলাম প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে ডিও নিয়ে ব্যবসা করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের দোসর।
এব্যাপারে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল মৃধা বলেন, ‘আমার দলের ছেলেরা ডিলার চালাইত, ও (জাহিদুল) কারসাজি করে এখন ডিলারি করছে আওয়ামী লীগ নেতার। জাহিদুলকে আমি ভয়ভীতি দেখাইনি বা মারধরের হুমকিও দিইনি। তবে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করেছি।’
এবিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজ বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি, তবে কোনো অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের দায় উপজেলা বিএনপি নেবে না।
বাউফলের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মাহবুল হাসান সিকদার বলেন, ‘আমি নতুন। বিষয়টি শুনেছি। কোনো অনিয়মের বিষয় হলে ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, সুলতান নামে ডিলার এলাকায় নেই। তাই জনস্বার্থে প্রকৃত ডিলারের মাধ্যমে চাল তুলে জনগণকে সহায়তা করা হচ্ছে। ডিলারকে হুমকি-ধামকির খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।