দেশে শিশুদের প্রতি নির্যাতন ও শিশু হত্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। পরিবারে শিশু নিরাপদে বেড়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা একদিন দেশের নেতৃত্ব দেবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তাই শিশুদেরকে ভালোবাসা আমাদের কর্তব্য।
মা অথবা বাবার হাতে শিশু সন্তান খুন হওয়ার মতো এমন জঘন্য ঘটনা আমাদের বিবেককে স্তব্ধ করে করে দেয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আলোকিত এ সমাজে এখনও এত নিষ্ঠুর মানুষ আছে! যাদের আচরণ দানব কিংবা জাহেলিয়াত যুগের বর্বরতাকে হার মানায়। মানুষের বিকৃত এসব আচরণ আমাদের ভাবিয়ে তোলে। মানবতাবিরোধী এমন অন্যায় কাজ কখনও মেনে নেয়ার মতো নয়। তাই শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দয়ামায়াহীন পাষণ্ড এসব মানুষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি কঠোর পদক্ষেপ নেয়া একান্ত জরুরি।
নিজের সন্তান নিজে হত্যা করার মতো এমন নিকৃষ্ট নিষ্ঠুর কাজ পৃথিবীতে আর কিছুই হতে পারে না। এটা নিঃসন্দেহে জঘন্যতম অপরাধ। সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে মা-বাবার কোল। পৃথিবীতে মা-বাবার চেয়ে আপনজন সন্তানের জন্য আর কেউ নেই। সন্তানের মুখ দেখলে মা তার সকল কষ্ট ভুলে যায়। পিতার তৃষ্ণা মিটে যায়। অশান্ত মন শান্ত হয়। সন্তানকে ঘিরে কত স্বপ্ন দেখে! সন্তান লালনপালনে কত ত্যাগ স্বীকার করে, কত কষ্ট, কত অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে। সন্তানের সুখের জন্য মা-বাবা নিজের সুখ বিসর্জন দেয়। সন্তানের সুখে পিতামাতা সুখী হয়। অথচ সম্প্রতি দেখা যায় বিপরীত চিত্র। সমাজে সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশুর প্রতি বারবার নৃশংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। যা আমাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিশু সন্তানের প্রতি মা-বাবার নিষ্ঠুরতা সত্যি অমানবিক। এটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় মা কিংবা বাবার হাতে নিরীহ নিষ্পাপ নিরপরাধ শিশু সন্তান পীড়নের শিকার হচ্ছে, এমনকি খুন হচ্ছে। এ কোন অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে সময়। সভ্য যুগের সভ্য সমাজে এ কোন অসভ্যতা? তবে কি সমাজ থেকে স্নেহ মমতা সহনশীলতা নির্বাসিত হতে চলেছে! আদরের সন্তানের প্রতি মা-বাবা কেন নিষ্ঠুর আচরণ করে? মা-বাবার নির্মম নিষ্ঠুরতার কারণে পাবন, তানহা, পাবেল, সামিউল, রায়হান, তুহিনসহ আরও অসংখ্য শিশুকে ইতোমধ্যে জীবন দিতে হলো। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
শিশুর সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুরতার কারণ হিসেবে যেগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে– শত্রু পক্ষকে ফাঁসাতে নিজের সন্তানকে হত্যা করে, পর পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করলে সন্তান দেখে ফেললে তা ধামাচাপা দিতে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলে, অবৈধ সম্পর্কের ফসল হিসেবে কোনো সন্তান হলে নিজের অপরাধ ও অপকর্ম আড়াল করতে সেই নবজাতক শিশুকে হয় হত্যা করে, অন্যথায় কোথাও ফেলে দেয়, ধারদেনার চাপে পড়ে বা ভরনপোষণ করতে না পেরে সন্তানকে খুন করে নিজেরাও আত্মহত্যার পথ বেচে নেয়, অভাবের তাড়নায় সন্তানের প্রতি বিরূপ আচরণ করে, সৎ মায়ের কুপরামর্শে নিজের সন্তানের ওপর ছুরি চালান, অধিক সন্তান হলে জ্বালা সহ্য করতে না পেরে খারাপ আচরণ করে, রোগাক্রান্ত, প্রতিবন্ধী বা মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তান হলে অনেকে সেই সন্তানকে বাঁকা চোখে দেখে ইত্যাদি। তাছাড়া সামাজিক অস্থিরতা, নৈতিক শিক্ষার অভাব ও মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রভৃতি কারণে মানুষের মধ্যে নিষ্ঠুরতা বাড়ে। যার ফলে মানুষ বিগড়ে যায় এবং খুন খারাবিতে লিপ্ত হয়।
পৃথিবীর আর কোনো শিশু সন্তান যেন তাদের শ্রেষ্ঠ নিরাপদ আশ্রয় থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সজাগ দৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শিশু হত্যা ও নির্যাতন কমবে বলে আশা করা যায়। সুন্দর এই পৃথিবীর আলো বাতাস সবার জন্য সমান। শিশুর অধিকার নিশ্চিত হোক। শিশু সন্তানের প্রতি মা-বাবার নিষ্ঠুরতা দূর হোক, ভালোবাসা জেগে উঠুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: নুরুল আমিন, সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। লালমোহন, ভোলা। nurulamin911@gmail.com, 01759648626.