রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে বক্তৃতাকালে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বক্তব্যের সময় হঠাৎ তিনি মঞ্চে ঢলে পড়েন। চিকিৎসকদের পরামর্শ সত্ত্বেও তিনি বারবার উঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং শেষ পর্যন্ত বসে থেকেই বক্তৃতা সম্পন্ন করেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সামনে আরেকটি লড়াই অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তার ভাষায়, “একটা লড়াই হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।” তিনি দাবি করেন, তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রামে জামায়াত জয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।
বক্তব্যের শুরুতেই একাধিক বার শারীরিকভাবে অস্বস্তিবোধ করে পড়ে যান তিনি। পরে তিনি বলেন, “আল্লাহ আমার হায়াত যতক্ষণ রেখেছেন, তার এক মিনিটও বেশি আমি থাকতে পারব না। কাজেই এটি নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না।”
শাসনক্ষমতায় আসলে জামায়াতে ইসলামীর কী ভূমিকা হবে, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জামায়াত যদি আল্লাহর ইচ্ছায় দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে ইনশাআল্লাহ।” এ সময় তিনি ঘোষণা দেন, সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী নির্বাচিত হলে দলীয় কেউ সরকার থেকে প্লট নেবেন না, ট্যাক্সবিহীন গাড়ি ব্যবহার করবেন না, নিজেদের বরাদ্দ পাওয়া টাকার হিসাবও দেশের ১৮ কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরবেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না। এই বাংলাদেশটাই আমরা দেখতে চাই।”
সমাবেশে উপস্থাপিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি এখানে জামায়াতের আমির হিসেবে আসিনি, এসেছি ১৮ কোটি মানুষের পক্ষ হয়ে কথা বলতে। শরীর আমাকে বারবার থামিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু আমি থামব না।” বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, “আমার মৃত্যু আল্লাহ নির্ধারিত সময়েই হবে। যতদিন বাঁচি, মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করে যাব।”
সমাবেশে প্রচণ্ড গরমে আরও অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে। আমিরের অসুস্থতার পর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “মহান আল্লাহ তাআলা তাঁকে আবার দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার তৌফিক দিয়েছেন।” অনুষ্ঠানের পরপরই ডা. শফিকুর রহমানকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এই সমাবেশে সাত দফা দাবি তুলে ধরে জামায়াত নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারসহ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর পদ্ধতি) নির্বাচন দাবি করে। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার নেতা–কর্মীর উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সমাবেশে জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরাও অংশ নেন।
ডা. শফিকুর রহমানের কথায়, “আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে ন্যায়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে। আমরা কথা দিচ্ছি— এই লড়াই থামবে না।”