নুরুল আমিন।।করোনাকালে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত কষ্টে আছে। তারা না পারে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ সহযোগিতা নিতে, না পারে কারো কাছে হাত পাততে। এমনকি মধ্যবিত্তরা কষ্টের কথা মুখ ফুটে কারও কাছে বলতেও পারে না। করোনাকালে নিম্নবিত্ত তথা গরিবদের জন্য রাষ্ট্রীয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। উচ্চবিত্তের জন্য দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা। কিন্তু মধ্যবিত্তের অবস্থা কী? তারা কি পাচ্ছে? তারা কিছুই পায় না। তাদের অবস্থা খুব শোচনীয়। তাদের দুর্ভাগ্যের প্রহর যেন শেষ হয় না। সীমাহীন কষ্টে তাদের দিন কাটে। অভাবের তাড়নায়, সংসারের চাহিদা মেটাতে না পেরে এবং সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেক মধ্যবিত্তের নীরবে নিভৃতে চোখের জলে বুক ভাসে, কেউ টের পায় না।
একসময়ের সচ্ছল মধ্যবিত্ত এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সময়ের ব্যবধানে অসহায়ত্বকে সঙ্গী করে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক মধ্যবিত্ত ক্রমান্বয়ে গরিব হয়ে যাচ্ছে। শেষ সম্বল হারানোর পরেও মধ্যবিত্তরা আত্মসম্মান নিয়ে সমাজে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখে এবং বেঁচে থাকতে চায়। মধ্যবিত্তদের অনেকে শহরে চলে গেছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। অনেকে বিদেশ গেছে। আবার অনেকে ছোটখাটো ব্যবসা করে। সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন ও কল্যাণ কাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। অথচ দুর্দিনে তাদের পাশে কেউ নেই। দেশে করোনার কারণে অনেকের আয় কমে গেছে, ব্যবসাবাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে, বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঙ্কট বহুগুণে বেড়েছে। অনেকে তিল তিল করে জমানো টাকা ভেঙে খেয়েছেন। অনেকে খরচ কমিয়ে দিনাতিপাত করছেন। কিন্তু বিপাক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বাসার সামনের দোকানের পাওনা পরিশোধের চাপ, বাড়ি ভাড়ার চাপ, সংসারের দৈনন্দিন খরচ এসব সইতে না পেরে শহরে ঘর বন্দী অনেকে রাতের আঁধারে ফিরছে গ্রামে। সরকারী গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর তথ্যমতে, দেশে ১৩ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসের প্রভাবে চাকরি হারিয়েছেন, ৫৬.৮৯ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, এবং ৬০ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে চাকরি হারিয়েছেন ৩৬ শতাংশ মানুষ। ৩ শতাংশ মানুষের চাকরি থাকলেও বেতন নেই। এদের বড় অংশই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। বিদেশেও অনেকে চাকরি হারিয়ে সঙ্গীন অবস্থায় আছেন। বিআইডিএস বলছে, বর্তমানে দেশের ২০ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। মহামারী করোনা মধ্যবিত্তের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে কমবেশি সব মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে মধ্যবিত্তের দুর্ভোগ বেশি। সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ও সমাজ বিনির্মাণে যাদের অগ্রণী ভূমিকা বেশি, সেই সব মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের এমন করুণ দশা সত্যি দুঃখজনক। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন। মধ্যবিত্তদের দুর্ভোগ কমাতে সরকার বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করলে দেশের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুফল হবে আশা করি