ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নিতে না পারায় ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সরাসরি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনেs ইশরাক বলেন, উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তাঁর নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। ইশরাকের অভিযোগ, “শপথ না পড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে নানা প্রশ্ন তুলে বিষয়টিকে ঘোলাটে করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ এবং আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাঁর (উপদেষ্টার) কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। অতএব, তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।”
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এবং গেজেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ইশরাককে শপথ পড়ানোর আইনি সুযোগ নেই। এর জবাবে ইশরাক পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, “যদি এ বক্তব্য সত্য হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি শপথ নিতে পারবেন না।” তাঁর আশঙ্কা, গেজেট প্রকাশের পর কারও মদদে একটি রিট মামলা করালেই এবং সেটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সময়ক্ষেপণ করলেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ বাধাগ্রস্ত হবে।
ইশরাক অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে বসিয়ে রাজনৈতিক ও আর্থিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলবো, আপনারা তদন্ত করুন—এই অল্প সময়ে কীভাবে এত দুর্নীতিতে জড়ালেন। উপদেষ্টা হিসেবে এই ব্যক্তিকে রেখে ঢাকা সিটি করপোরেশন চলতে পারে না।”
ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব বুঝে না পেলেও ইশরাক নিজেকে “মাননীয় মেয়র” বলে দাবি করে নগর ভবনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। গত দুই দিনে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক ও ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি। এসব বৈঠকের ব্যানারেও তাঁর নামের আগে “মাননীয় মেয়র” লেখা ছিল।
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনরত কর্মচারীরা ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সব ফটকে তালা লাগিয়ে কার্যত ভবনটি অচল করে রেখেছেন। এই অবস্থার মধ্যেও ইশরাক সিটি করপোরেশনের জরুরি সেবা চালু রাখার ঘোষণা দেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিজয়ী হন। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু এরপর থেকেই শপথ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনি জটিলতার কথা বলে শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকে।
ইশরাক বলেন, সংকটের সমাধান না হলে আন্দোলন সচিবালয় পেরিয়ে রাজপথে গড়াবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই অবস্থার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা দায়ী। প্রধান উপদেষ্টাও এর দায় এড়াতে পারেন না।”