২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের বেশিরভাগ ব্যক্তির বিচার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে তারা আশাবাদী।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। এ আয়োজনে জুলাই গণহত্যা বিষয়ক বিচার কার্যক্রম, প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কখনোই মোবাইল কোর্টের মতো দ্রুত সম্পন্ন করা যায় না। এই বিচার প্রক্রিয়ার পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, আসামিদের অধিকার, আইনি শুদ্ধতা ও প্রক্রিয়াগত সময়।’ তিনি জানান, তারা সেপ্টেম্বর মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর নভেম্বর পর্যন্ত আদালতের কাঠামো ও কার্যক্রম স্থিতিশীল করতে সময় লেগেছে। তবে তার পরবর্তী সময়ে, ছয় মাসের কম সময়েই প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পেরেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, যা বিচার প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, বর্তমানে চারটি মামলার বিচার কার্যক্রম আদালতে চলমান রয়েছে এবং এসব বিচার উন্মুক্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অনেক অংশ লাইভ সম্প্রচারও করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে শনিবার (৩ আগস্ট)। এই মামলার সাক্ষী নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘১০ কোটির বেশি মানুষের সাক্ষ্য থাকলেও আমরা এমন সাক্ষীদেরই বাছাই করেছি যাদের মাধ্যমে মামলার মূল অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হবে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, এত দিনেও কোনো রায় হলো না। কিন্তু যারা বিচারপ্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন তারা বুঝতে পারেন না, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। সাধারণ ফৌজদারি মামলার সঙ্গে এই বিচারব্যবস্থার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা মূলত সাধারণ অপরাধ তদন্তে অভ্যস্ত ছিলেন। অথচ এখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল বিষয়ে তদন্ত করতে হয়েছে। তারপরও নিরপেক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতা বজায় রেখে তারা কাজ করেছেন।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, যিনি আগেও শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “২০২৪ সালের গণহত্যা এমন নৃশংসতায় ভরপুর যা ১৯৭১ সালের পাক হানাদারদের পাশবিকতাকেও ছাপিয়ে গেছে।”
আলোচনার শুরুতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের স্বাগত বক্তব্য দেন। এরপর জুলাই গণআন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নিহত শহীদ ইয়ামিন ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের পরিবার এবং বিচার সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি আরমান হোসেনসহ অনেকে।
চিফ প্রসিকিউটরের ভাষ্যমতে, বিচার যেন ভবিষ্যতের কোনো সরকার পরিবর্তন করতে না পারে, সে লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রমাণ, নথি ও প্রক্রিয়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি বড় বিচারিক অধ্যায় শেষ হবে।’