তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃতালতলী উপজেলার সুবিধা বঞ্চিত নারীদের সমস্যায় পাশে দাঁড়ান তথ্যসেবা কর্মকর্তা। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়েও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। এ উপজেলায় ‘তথ্যসেবা কেন্দ্র’ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের কাছে। তথ্য আপা : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন করতে সরকারের নতুন সেবা ‘তথ্যসেবা কেন্দ্র’।তথ্যসেবা কর্মকর্তার কাজ হলো তৃণমূলের নারীদের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছে দিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা, জেন্ডার, আইন এই ছয়টি বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থা।তালতলী উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে জানা যায়, তালতলী উপজেলায় গত এক বছরে ১০২০০ জন সেবা গ্ৰহীতাকে সেবা প্রদান করেন উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্রের তথ্যসেবা কর্মকর্তা সংগীতা সরকার , তথ্য সেবা সহকারী শীলা বসু এবং মাহমুদা ইসলাম।
তারা জানান, গত কয়েক মাসে বাল্যবিয়ে বন্ধ, স্বামী ও শশুর বাড়ি কর্তৃক নারী নির্যাতন সমাধান, যৌতুক নিরোধ, ধর্ষণ, পারিবারিক বিভিন্ন জটিলতার সমাধান ও প্রতি মাসে তৃণমূল নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে তাদেরকে সচেতন করছেন। এছাড়া উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ও প্রদান করা হয়ে থাকে যার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস পরীক্ষা, ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ, রক্তচাপ পরিমাপ, শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে সারা দেশে ৪৯০টি উপজেলায় তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়। এর আগে প্রথম পর্যায়ে ১৩টি উপজেলায় এ সেবা চালু করা হয়েছিল।
তালতলী উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা সংগীতা সরকার বলেন, ‘আমরা আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মিনা পারভিন স্যারের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রামীণ সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত নারীদের পাশে সবসময় ছায়ার মত আছি। গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত নারীদেরকে বিপদের সময়ে সঠিক তথ্য সেবা দেয়া হচ্ছে আমাদের মূল কাজ। অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে উঠান বৈঠক করে গ্রামীণ মহিলাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন : স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা, ডিজিটাল সেবা সমূহের নানা দিক সম্পর্কে আলোচনা করে থাকি। উপজেলা তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত নারীরা খুব সহজেই বিদেশে থাকা আপন মানুষের সাথে স্কাইপিতে যোগাযোগ করতে পারছে। স্কুল-কলেজ পড়া ছেলেমেয়েরা তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে তাদের পরীক্ষা ফলাফল প্রিন্ট করে নিতে পারছে। চাকরি প্রত্যাশী বোনেরা বিনামূল্যে অনলাইন আবেদন পূরণ করতে পারছেন। ভিজিডির অনলাইন আবেদন তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে পূরণ করে থাকি।’
তিনি আরও, ভবিষ্যতে সেবার মান আরো বাড়ানো হবে এবং এ কার্যালয়ে নারীদের সকল ধরনের সেবা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। সরকারের এমন মহতী উদ্যোগের কারণে সমাজে পিছিয়ে পড়া নির্যাতিত নারীরা এ সেবার মাধ্যমে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। তিনি উপজেলার সকল তৃনমূল পর্যায়ে নারীদের সমস্যা সমাধানে এ কার্যালয়ে সেবা নেয়ার জন্য অফিসে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীরা অনেক সচেতন হবে এবং নিজের ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জানবে বলে মনে করেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিকা নাজনীন তিনি বলেন, তথ্য অফিসার উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীরা বিভিন্ন ধরণের সেবা পাচ্ছে। যেমন নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারে। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কি করতে হবে, এ বিষয়টা অনেকেই জানতো না। তৃণমূলের মেয়েরা অনেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লজ্জাবোধ করে কি বলতে বা কিভাবে জানবে। তথ্য আপা প্রকল্পটি নারী দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় তথ্য আপার সাথে সরাসরি কথা বলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিশেষ করে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীরা অনেক এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন এই ভাইস চেয়ারম্যান।
তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল- কবির বলেন, বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নারীদের ক্ষমতায়নের (তথ্য আপা প্রকল্প-২) জন্য দেশের ৪৯০টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে তালতলীতে তৃণমূলের নারীদের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মা-বোনদের সচেতন করা হচ্ছে। সরকার এই তথ্য সেবা কেন্দ্রর কার্যক্রম চালু রাখলে নারীদের ক্ষমতায়নে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বিশ্বের কাছে নারী পুরুষের সম অধিকারের বিষয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবেন
রোল মডেল।