মোঃ নূর ইসলাম নয়ন, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরে অসুস্থ অবস্থায় কেড়ে নেয়া ১৩ মাস বয়সের সেই শিশুকে উদ্ধার করে মানবাধিকার কর্মী মোছাঃ জেয়াসমিন আরা পপির কলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্বামী ও শাশুড়িকে কোর্টে প্রেরণ করা হলে বিচারক তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৪ আগষ্ট দিনাজপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রী পড়াশুনার সময় দিনাজপুর শহরের কাঞ্চন কলোনি এলাকার নাসিরের মেয়ে মোছাঃ জেয়াসমিন আরা পপির (৩০) এর সঙ্গে চিরিরবন্দর উপজেলার ১১নং তেতুলিয়া ইউনিয়নের শাহ্পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সহপাঠি মোঃ হাসমত তনুর বিয়ে হয়। পপি বিয়ের পর মানবাধিকার কর্মী হিসাবে এনজিও পল্লীশ্রীতে পার্বতীপুরে উপজেলায় চাকুরি করেন। এরই মধ্যে পপির কোল জুড়ে জন্ম নেয় ছেলে নুর জুনকার নাঈম। গত শুক্রবার সকালে শিশু নুর জুনকার নাঈম অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসক দেখানো নিয়ে মতবিরোধের দেখা দিলে স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজন মিলে তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে পপিকে ঘরে ঢুকিয়ে তালা মেরে আটকে রাখে। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ফুপাতো ভাই মোঃ রাসেদ পুলিশ নিয়ে তার শশুরবাড়ীতে যায়। এ সময় পুলিশ পপি ও তার সন্তানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। থানায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে শিশু নুর জুনকার নাঈম কে মায়ের কাছে তুলে দেয় পুলিশ। সেই সঙ্গে পপিকে কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ীতে গিয়ে মায়ের কাছে থাকতে বলা হয়। তাই পপি শশুর বাড়ীতে গিয়ে তার ও সন্তানের কাপড়চোপড় নিয়ে ভ্যানে করে বাবার সঙ্গে রওয়ানা দেন। পথে চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর এলাকায় স্বামী, দেবরসহ ৮/১০ জন মটর সাইকেল যোগে এসে পথরোধ করে। এ সময় তাদেরকে মারধর করে, শিশু পূত্র সন্তানকে কেড়ে নেয়া হয়। মারধরের ঘটনায় পপি, তার বাবা এবং ফুপাতো ভাই আহত হয়। আহত অবস্থায় পপি তার বাবা ও ফুপাতো ভাইকে নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ আগে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে পপিকে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়।২১শে ফেব্রুয়ারী চিরিরবন্দর থানা পুলিশ পপির পিতা মোঃ নাসির খানকে ডেকে নারী শিশু নির্যাতন এবং যৌতুক আইনে একটি মামলা গ্রহণ করেন।
মামলা হওয়ার পর ২১শে ফেব্রুয়ারী বিকেলে পপির স্বামী মোঃ হাসমত তনু ও শাশুড়ী মোছাঃ বিউটি বেগমকে বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেন। সেই সঙ্গে শিশু নুর জুনকার নাঈমকে উদ্ধার করে মায়ের কলে ফিরিয়ে দেন। গতকাল সোমবার দুপুরে হাসাপাতাল থেকে বাবার বাড়ীতে ফিরেছেন পপি। তিনি বলেন, দু‘জনের মধ্যে সম্পর্কের পর পারিবারিক ভাবে বিয়ের সময় সুখের আশায় এক লক্ষ টাকার আসবাবপত্র বাবার বাড়ী থেকে নিয়েছিলেন। কিন্তু এতে স্বামী ও তার বাড়ীর লোকজনদের মন ভরেনি। তারা প্রায় সময় আরো ৫ লক্ষ টাকার জন্য নির্যাতন করত। আমি একজন মানবাধিকার কর্মী হিসাবে এই অন্যায় আবদার কোন দিনই মেনে নেয়নি। তাই আমাকে এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।