মোঃ নূর ইসলাম নয়ন, দিনাজপুর প্রতিনিধি \ চৈত্র এর মাঝামাঝি সময়ে দিনাজপুরের লোভনীয় লিচুর গাছে গাছে এখনও মুকুলের সমারোহ আর
মৌ মৌ গন্ধ ফুটে উঠেছে।
দেশে সেরা মানের লিচু দিনাজপুরের লিচু। মিষ্টি ও রসালো স্বাদ আর
বৈশিষ্ট নিয়ে বিভিন্ন জাতের এ লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই,
মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশী লিচুর মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে
গাছের ডালপালা। লিচু বাগানগুলোতে যেদিকে চোখ যায় শুধু মুকুলের
সমারোহ। দিনাজপুর সদরের মাসিমপুর, কসবা, বাশেরহাট, পুলহাট,
পাঁচবাড়ি, বিরল উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এবার লিচু গাছের
ডালে ডালে প্রচুর মুকুল এসেছে। গাছে গাছে শতকরা ৬৫ভাগ মুকুল
এসে গেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও লিচুর বাম্পার
ফলনের সম্ভাবনা।
লিচু গাছের মুকুল দেখে মালিকরা আশাবাদী, বাগান বিক্রি করে এবারও
লাভবান হবেন। বৈশাখ মাসে লিচু পাকা শুরু হয় এবং বাজারে পাওয়া যাবে।
এরই মধ্যে লিচু বাগান নিয়ে বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। এ লিচু বাগান
নিয়ে ৪ মাস যাবত ব্যবসা চলবে।
দশবছর আগেও দিনাজপুরে লিচু চাষের জমির পরিমান ছিল ১হাজার ৫শ
হেক্টর। সেখানে এটা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৫হাজার ৬শ ১০হেক্টর। দিন
দিন লিচুর ফলন এবং দাম ভাল পাওয়ায় এ চাষের জমি বাড়ছেই।
পুলহাট-মাসিমপুরের আসাদুজ্জামান লিটন জানান, দিনাজপুরের দক্ষিণ
কোতয়ালী ও মাসিমপুরসহ আশেপাশে কিছু এলাকায় ভিটা, জমি,
বশতবাড়ী এবং ডাঙ্গা জমিতে লাগানো গাছই ছিল লিচুর আবাদ। কিন্তু
এখন ব্যাপক আকারে বিস্তৃত হয়েছে এই লিচুর চাষ। অনেকে লিচুর
বাগানে বিভিন্ন সবজিরও চাষ করছেন। এতে লাভবান আরও বেশী হচ্ছেন
তারা।দিনাজপুর সদরে হোসেনপুর, নুলাইবাড়ি ও মহারাজপুরে বেশ কিছু
সংখ্যক বিভিন্ন জাতের লেচুর বাগানে প্রচুর মুকুলের সমারোহ দেখা
যায়।
বিরলের লিচু বাগান মালিক খাদেমুল ইসলাম জানান, একটি বড় গাছে
২০ থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত এবং সবচেয়ে ছোট গাছে ১ থেকে দেড়
হাজার লিচু পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ জানায়, দিনাজপুর জেলায় ৫৬১০ হেক্টর
জমিতে ছোট-বড় নিয়ে প্রায় ৯ হাজার ৫০৪টি লিচুর বাগান রয়েছে।
বাগান ছাড়াও কিছু সংখ্যক বাড়ী, বাড়ী সংলগ্ন ভিটা জমিতে ২/৪টি
করে লিচু গাছ রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়। গত অর্থ
বৎসরে ৩৩৪৮৪ মেট্রিক টন লিচু হয়েছিল।
বিরল কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহবুর রহমান জানান, প্রকৃতি এবং
আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবারও দিনাজপুরে ফলন হবে বাম্পার। গাছে
গাছে শতকরা ৬৫ ভাগ মুকুল এসে গেছে।
আরও জানান লিচু চাষে চৈত্র মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচের প্রয়োজন হয়।
অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বিরলে লিচুর চাষাবাদ বেশী।
উল্লেখ্য, এক দশক যাবত অবিশ্বাস্য গতিতে বৃহত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন
উপজেলায় লিচুর চাষাবাদ বেড়েছে। জেলা সদরসহ কাহারোল, বিরল,
চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ প্রভৃতি উপজেলায় এই ফলের চাষাবাদ বেড়েই চলেছে।