এফএনএস
জন্মের কয়েক বছর পরই বাবা-মা হারান। অন্যের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন দীর্ঘদিন। পরে শ্যালকের (বউয়ের ছোট ভাই) অত্যাচারে সেই বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীÑসন্তান নিয়ে পাখির মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। বুড়ো বয়সে এসে নিজের নামে তিনিই কিনা পেলেন জমির দলিল ও বাড়ির কাগজ । তাই উচ্ছ্বাস যেন কমছে না শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার শালচূড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব দিন মজুর লাল মিয়া ও তার স্ত্রী রেজিয়া খাতুনের। তারা নতুন পাওয়া বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে বললেন, আধা পাকা বাড়িটি তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ আছে,পানি আছে। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারবেন।
লাল মিয়ার মতো মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের হলদীগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্রে নতুন করে আরও ২৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ বাড়ি দিয়েছে সরকার। রবিবার (২০ জুন) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি উপকারভোগীদের হাতে জমির দলিল ও বাড়ির চাবি তুলে দেন।
হলদীগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী উপকারভোগী তাসলিমা খাতুনের (৩০) সঙ্গে কথা বলেন।
তাসলিমা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি স্বামী পরিত্যাক্তা। আমার কোন ঘর-বাড়ি ছিল না। বাবার বাড়িতেই ছিলাম। এখন আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বাড়ি উপহার দিয়েছেন। সেই বাড়ি পেয়ে অনেক ধন্য হয়েছি, তার জন্য অনেক খুশি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এরকম বাড়িতে থাকতে পারবো কখনই ভাবতে পারিনি।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ, শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ প্রমুখ।
হলদীগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ৩ একর ১৩ শতক আয়তনের । এ জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ১৫টি পরিবার আছে। নতুন করে যুক্ত হলো আরও ২৫টি পরিবার। আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাড়ি প্রদান উপলক্ষে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। নতুন নির্মিত বাড়িগুলোর উদ্বোধন উপলক্ষে বাড়ির দরজার সামনে লাগানো হয়েছে নামফলক, ঝুঁলানো হয়েছে ‘নৌকা তোরণ’। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকারভোগীদের দেওয়া হয়েছে নতুন জামা-কাপড়। সবমিলে নিজের নামে জমির দলিল ও জমির ওপর সেমি পাকা বাড়ি পেয়ে ঘরে ঘরে বইছে আনন্দ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে শেরপুর জেলার সদর উপজেলায় ৩০টি, নকলায় ৪২টি, নালিতাবাড়ীতে ৫০টি, শ্রীবরদীতে ২০টি ও ঝিনাইগাততে ২৫টি বাড়ি রয়েছে। এগুলো প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, বিধবা, কাজের মহিলাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। বাড়ি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ কাটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ১৪৫টি বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও বাড়ি উপহার দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ দরিদ্র মানুষের স্বপ্ন সত্যি হবে।
You cannot copy content of this page