নুরুল আমিন।। বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। ভাঙছে সংসার। মা-বাবা বেঁচে থাকার পরেও আদর-স্নেহ বঞ্চিত হচ্ছে সন্তান। সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা নতুন কিছু নয়। যুগযুগ ধরে এ ধারাবাহিকতা চলে আসছে। তবে আগের তুলনায় করোনাকালে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা খুব বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই এখন বেশি তালাক চাইছেন। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘শিক্ষিত মেয়ের চাকরি জীবন, তার ব্যক্তি স্বাধীনতা, তাকে কিছু বিষয়ে সহযোগিতা করা- এসবে পূর্ণ স্বাধীনতা বা সহযোগিতা করতে নারাজ স্বামীরা। ফলে একটি শিক্ষিত মেয়ের যখন আত্মসম্মানে আঘাত আসে, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন ডিভোর্সের।’ এক জরিপে দেখা গেছে, ‘প্রতি ঘণ্টায় ভাঙছে একটি সংসার। এক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ তালাক দিচ্ছেন নারীরা, ৩০ শতাংশ দিচ্ছেন পুরুষরা। তবে এটা কেবল শহরের হিসাব।’ তালাকের এ দৌড়ে অশিক্ষিতদের তুলনায় শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীরা খুব এগিয়ে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা বলেছেন, ‘শহরে ডিভোর্সের মধ্যে নারীরা এগিয়ে থাকলেও সেটা সারা দেশের চিত্র নয়। নিম্নবিত্তের বিয়ে বা ডিভোর্সের কোন তথ্য নথিভুক্ত সব সময় হয় না। তবে নিম্নবিত্তের মধ্যে স্বামীরাই ডিভোর্স দিচ্ছে বেশি। সেখানে মেয়েটি সংসার টিকিয়ে রাখতে অনেক কিছু সয়ে গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা টিকছে না এবং অনেক ক্ষেত্রে বিয়েটা ঝুলে থাকে।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্য অনুযায়ী, ‘২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ১৭ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে। মহামারীকালে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন।’
সংসার জীবনে বনিবনা না হওয়া, মতের গরমিল, পারিবারিক সহিংসতা, অভাব-অনটন, ভুল বোঝাবুঝি, দুর্ব্যবহার, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, সন্দেহ প্রবণতা, মাদকাসক্তি, যৌতুক, স্বার্থের সংঘাত, আত্মসম্মানবোধ, বেপরোয়া চলাফেরা, পরকীয়া সম্পর্ক, বিদেশী সংস্কৃতির কুপ্রভাব, আধুনিকতার নামে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, প্রভৃতি কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে যায়। আবার কখনও কখনও ছেলেমেয়ে নাহলে কিংবা শারীরিক দুর্বলতার কারণেও সংসার ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। করোনাকালে আয় সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ সংসারে কলহ-বিবাদের জের ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।
মহামারীর মতো তালাক প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সমাজ ও পরিবারে নেমে আসে অশান্তি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা সবাই। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ভাঙা সংসারের শিশুর ভবিষ্যত। তালাক যে কারণে হোক না কেন, ভাল মানুষ হওয়ার বদলে অনাদরে, অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিশুটি খারাপ মানুষ হয়ে ওঠে। যার দায় এড়াতে পারে না সমাজ ও তার মা-বাবা।
লেখকঃ কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক। লালমোহন, ভোলা।
মোবাইল ঃ 01759648626.