চট্টগ্রাম ব্যুরো ঃদানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে মুখরিত পাহাড়ি জনপদ। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে মাসব্যাপী বৌদ্ধদের প্রধান দানোৎসব কঠিন চীবর দান। এ উপলক্ষে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে লংগদু উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ির আর্যগিরি বনবিহারে উদযাপিত হয়েছে ৪র্থ তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয়ে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে দুইদিন ব্যাপী ধর্মীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্য বুদ্ধপুজা, বুদ্ধমূর্তিদান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, কঠিন চীবর দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, সুত্রপাঠ, ধর্মীয় দেশনা, হাজার বাতি দান, কল্পতরু প্রদক্ষিণ ও উৎসর্গসহ নানাবিধ দান উল্লেখযোগ্য।
দানোৎসবকে ঘিরে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীর ঢল নামে। বিশ্বের সকল প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল কামনায় এবং মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের জন্য ভিক্ষু সংঘের সমীপে নিবেদন করা হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা। স্মরণ করা হয় মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেকে। ভগবান বুদ্ধের জয়ধ্বনিতে হাজারো পুণ্যার্থীদের ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মুখর হয়ে উঠে পুরো বিহার প্রাঙ্গণ।
দুপুরে কল্পতরু ও কঠিন চীবরকে পুরো বিহার এলাকা প্রদক্ষিণ করে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়। পরে উদ্বোধনী ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় কঠিন চীবর দানোৎসব।
রুপেল চাকমার অনুষ্ঠান পরিচালনায় পঞ্চশীল পাঠ করেন বিহার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিবাকর চাকমা। বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন বৈশাখী চাকমা। এ সময় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি অজয় চাকমা (মিত্র) ও বিহার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিবাকর চাকমা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, ১নং আটরকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ অন্যান্য প্রমূখ।
ধর্মীয় বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মদেশনা দেন, সাধনাটিলা বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বুদ্ধবংশ মহাস্থবির। আরো ধর্মদেশনা দেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের অন্যতম ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ মুদিতা বংশ মহাস্থবির, রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ গিরিমানন্দ স্থবির ও জয়বর্ধন স্থবিরসহ অন্যান্য প্রমূখ ভিক্ষু। এ সময় অন্যান্য ভিক্ষুর মধ্যে আটকরকছড়া আর্যগিরি বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ অমর রতন্ন স্থবিরসহ অন্যান্য প্রমূখ ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মদেশনায় ভিক্ষুরা বলেছেন, বৌদ্ধদের সর্বশ্রেষ্ঠ দানই হচ্ছে কঠিন চীবর দান। ২৪ ঘন্টার মধ্যে গৌতম বুদ্ধের প্রধান সেবিকা বিশাখা চীবর বুনে গৌতম বুদ্ধকে দান করেছেন। যা সহজেই এ দান করা সম্ভব নয়।