মোঃ মিঠু সরদার।। শীত আসতেই বরগুনার তালতলীতে বিভিন্ন চরে শুঁটকি তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। জেলে পল্লীগুলোতে শুঁটকি ব্যবসায়ী, মালিক ও শ্রমিকদেরও আনাগোনা বেড়েছে। কাজের চাপে শ্রমিকদেরও দম ফেলার সময় নেই। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলার শারচর, সোনাকাটা, মরানিদ্রা, ছোট আমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশানবাড়িয়া খেয়াাঘাটের চরের শুঁটকি পল্লিতে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ চলে। অতিরিক্ত লবণ ও কীটনাশক ব্যবহার না করায় দেশে যেমন এর চাহিদা রয়েছে,তেমনি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, শুঁটকি মৌসুমে ৩ থেকে ৪ হাজার মণ শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। এই সময় গুলোতে সরব থাকে শুঁটকি পল্লীর ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকরা। প্রতিটি শুঁটকি পল্লী থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ‘দেড়শ মণ’ শুঁটকি বিক্রি হয়। তিনি বলেন, তালতলীর শুঁটকি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। খেতে সুস্বাদু ও মজাদার হওয়ায় বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন ও দুবাইতে চাহিদা অনেক বেশি। জেলেরা জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকি পল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী এবং পুরুষ শ্রমিকরা সেগুলো পরিষ্কার করেন। এরপর মাছগুলো ধুয়ে মাচায় এবং পাটিতে বিছিয়ে শুকানো হয়। ছয়-সাত দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। শুঁটকি প্রস্তত করার সময় কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয় না বলে এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা ক্রেতাদের কাছে খুব বেশি। এই চরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও পাঠানো হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৭০০-৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার, মাইট্যা ৮০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৬০০ থেকে ৭০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৯০০ এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আশারচর শুঁটকি পল্লি ঘুরে দেখা যায়, শত শত শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। সাগর থেকে একের পর এক ট্রলার এসে কিনারে ভিড়ছে। ট্রলার নোঙ্গর করা মাত্র শ্রমিকরা ট্রলারের খোল থেকে মাছ তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরছেন। মাছ তোল শেষে মাথায় মাছের ঝাঁকা নিয়ে ছুটছেন চরে। চরের পল্লীতে নিয়ে মাছ ফেলা মাত্র কেউবা মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করছেন। কেউবা আবার বড় মাছ ফালি করছেন। কেউ কেউ মাচা কিংবা পাটি বিছানোর কাজ করছেন। জেলে আবদুর রহমান জানান, তালতলীতে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, বেরাগী, ফাইসা, তপসী, বাইন ও ছোট পোয়ামহ ২৫ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি হয়। পাশাপাশি চিংড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও চাহিদা রয়েছে। এখান থেকে ছোট চিংড়ি মাছের শুঁটকি পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন নামি-দামি কোম্পানি গুলোতে সরবরাহ হয়ে থাকে। খবির উদ্দিন নামের আরেক জেলে বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুঁটকিতে ওষুধ মিশাবো না। রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি করি আমরা। তাই দেশ এবং দেশের বাইরে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। মরানিদ্রা শুঁটকি পল্লীর নারী শ্রমিক রাহেলা বেগম বলেন, এই হানে শুঁটকিতে কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। ছোট আমখোলা গ্রামের শ্রমিক আবু তালেব বলেন, এই হানে মাছ হুগাইতে কোন ওষুধ দেই না মোরা। ওষুধ দেওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের লইগ্যা খুব খারাপ। শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. রুপচাঁন হাওলাদার জানান, তালতলীর অনেক শুঁটকি স্থানীয় মানুষজনের মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে। সেখানে এর চাহিদা প্রচুর। তবে সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানির কোনো ব্যবস্থা নেই বলে তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম জানান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে রপ্তানির ব্যবস্থা করা গেলে জেলেরা অনেক লাভবান হবে। সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানির জন্য মৎস্য অধিদপ্তারে সুপারিশ পাঠানো হবে।
You cannot copy content of this page