বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭। ৯ বছরের ব্যবধানে দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ৭৭ হাজারের বেশি। আর শিশুশ্রমিকসহ কোনো না কোনোভাবে শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্ত শিশুর সংখ্যা আরো বেশি, ৩৫ লাখেরও বেশি। পরিসংখ্যানগুলো আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। ‘ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার সার্ভে-২০২২’ নামে এই প্রতিবেদনে শিশুশ্রমের নানা দিক তুলে ধরা হয়। ২০১৩ সালের জরিপে দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৪। এটা অবশ্য ঠিক, ৯ বছরে দেশের জনসংখ্যা যতটা বেড়েছে, মোট শিশুর সংখ্যা যে পরিমাণ বেড়েছে, সেই তুলনায় শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাত খুব একটা বেশি নয়। তবে অর্থনৈতিক অবকাঠামো, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক খাতে দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, সেখানে দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি নেতিবাচক হওয়াই কাম্য ছিল; কিন্তু তা হয়নি। অবশ্য মন্দের ভালো দু-একটি দিকও রয়েছে, যাকে ইতিবাচকভাবেই দেখা যেতে পারে। এর একটি হলো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রমিক রয়েছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন। ২০১৩ সালের জরিপে এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার ১৯৫। অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রমিক কমেছে দুই লাখ ১১ হাজার ৯৮৩ জন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে কিংবা উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এখনো শিশুশ্রমের যে ব্যাপকতা, মেয়েশিশুরা যেভাবে বাল্যবিবাহের শিকার হয় কিংবা দেশে প্রাথমিক শিক্ষার যে দুর্বল চিত্র, তার কোনোটাই প্রত্যাশিত পথে এগোচ্ছে না। প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শ্রমসচিব জানিয়েছেন, শিশুশ্রম নিরসনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্প নেওয়া আর বাস্তব উন্নয়ন এক কথা নয়। প্রকল্প নিতে হবে, একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করতে হবে। শিশুদের শৈশব হতে হবে আনন্দময়। এ সময় শিশুরা শিখবে, জানবে, ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের তৈরি করবে। তারা ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশের অনেক শিশুর শৈশবের সেই আনন্দ কেড়ে নিয়েছে দারিদ্র্য। দুমুঠো আহার জোটাতে তাদের পথে নামতে হয়. হাত পাততে হয়, মুট বইতে হয়, কলকারখানায় বা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যেতে হয়। তাই সরকারকে শিশুশ্রমে না আসার প্রেক্ষাপট তৈরি করতে হবে ও তাদের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই, একটি শিশুও যেন তাদের শৈশবকে অমানবিক শ্রমে নিয়োজিত না করে। শিশুদের জন্য বসবাসযোগ্য হয়ে উঠুক পৃথিবী